শেরপুরে সফলতার ২ বছর পূর্ণ করলেন পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম

প্রকাশিত: ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ৮, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেরপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ২ বছর পূর্ণ করলেন জেলার মানবিক পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম। তিনি ২০১৮ সালের ৭ জুন এ জেলায় যোগদান করেন। একজন চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার সদিচ্ছায় জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সেই সাথে জেলা পুলিশ বিভাগের কাজে এসেছে গতিশীলতা। যে কারণে পুলিশ সুপার আজীমের নাম এখন এ জেলার মানুষের মুখে মুখে। বিশেষ করে চলমান করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে অনন্য সহায়তার কারণে জেলা পুলিশ পেয়েছে মানবিক পুলিশের সু-খ্যাতি। জাতীয় গণমাধ্যমে উঠে আসছে জেলা পুলিশের ইতিবাচক কর্মকান্ডের প্রতিবেদন।


এদিকে ৭ জুন রবিবার শেরপুরে দায়িত্ব পালনের সফলতার ২ বছর পূর্ণ করায় পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস, সহকারী পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) জাহাঙ্গীর হোসেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, ওসি (তদন্ত) মনিরুল আলম ভুইয়া, ডিআইও-১ মোহাম্মদ আবুল বাশার, ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান, শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন, নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ বাদল, নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন শাহসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। ওইসময় তারা পুলিশ সুপার আজীমকে নিয়ে সফলতার ২ বছর পূর্তির কেক কাটেন।


জানা যায়, জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের সাথে পুলিশের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, রেঞ্জ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ভাবনা বিষয়ক সম্মেলন, জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে বিতর্ক উৎসব, জেলা শহরের যানজট নিরসনে ইজিবাইকের চলাচল নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিকে জরিমানা আদায়ে ই-প্রসিকিউশন সিস্টেম চালু, জাতির পিতার জন্মদিনে ছবিমেলা, বৈশাখে শিশু উৎসব, সোহাগপুর বিধবা পল্লীর বিধবাদের মাঝে বৈশাখের উপহার, ঈদ উপহার বিতরণ, তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া সম্প্রদায়ের মাঝে উপহার বিতরণের পাশাপাশি জেলার সকল গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে বৈশাখী ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়, প্রয়াত পুলিশ সদস্যদের পরিবার ও কর্মরত সদস্যদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে সকল মহলে হয়েছেন সমাদৃত। জেলায় বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশসহ সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচিও পুলিশ বিভাগের তরফ থেকে পালিত হয়ে আসছে তার তৎপরতায়।

সেইসাথে তিনি অসংখ্য ব্যতিক্রমী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে নিজেকে একজন সৎ, দক্ষ ও সৃজনশীল পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পেয়েছেন সু-পরিচিতি। কেবল বড় ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রেই নয়, মাঝারি-ছোট ঘটনার ক্ষেত্রেও হুট করেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি। পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম কাজে সাহসিকতা, কর্তব্য-নিষ্ঠা ও অনন্য সেবার স্বীকৃতি হিসেবে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) সেবা পদক। এর আগে ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি প্রথমবারের মতো এবং ২০১৯ সালের ১২ মার্চ দ্বিতীয়বারের মতো ময়মনসিংহ রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ করোনা ভাইরাসজনিত কঠিন পরিস্থিতিতে জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জেলা পুলিশের তরফ থেকে নেওয়া হয় কার্যকর উদ্যোগ। ওই উদ্যোগের আওতায় জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম’র নেতৃত্বে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু হয়। জেলায় হাটবাজার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১০ লাখ সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, পুলিশ ভ্যানে, পুলিশের মুখে মাইকে প্রচার, নিয়মিত সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার প্রচারসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বসানো হয় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বেসিন। সেইসঙ্গে ওষুধের দোকানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অন্যান্য বড় বড় দোকানগুলোর সামনে কেনাকাটার সময়কালে ক্রেতা সাধারণের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ সদস্যদের নিজ হাতে এঁকে দেয়া হয় গোলবৃত্ত, সেইসাথে ওষুধের দোকানসহ কেনাকাটার বিভিন্ন দোকানে ‘নো মাস্ক, নো মেডিসিন ও নো মাস্ক নো বাজার’ লেখা সম্বলিত পোস্টার টানিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় অঘোষিত লকডাউন কার্যক্রম শুরু হলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে শহরে অবাধ জন যাতায়াত নিয়ন্ত্রণসহ মানুষকে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ টহল জোরদার করে পুলিশ। আর করোনা পরিস্থিতিতে কৃষকের অর্থ সংকটের পাশাপাশি শ্রমিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের তরফ থেকে শুরু করা হয় ধান কাটা উৎসব। সদরসহ ৫ উপজেলায় ধান কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকে সেই উদ্যোগ।
শুধু তাই নয়, ‘মানবিক পুলিশের চোখে জনতার আকাক্সক্ষা লেখা থাকে’ এ মূল প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জেলা পুলিশের তরফ থেকে দীর্ঘ সাধারণ ছুটি আর লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের পরিবারগুলোকে বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়ানো হয়। করোনা ইমার্জেন্সী রেসপন্স টিম ও স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সহযোগিতায় দিনমজুর, রিক্সা-ভ্যানচালক, চা দোকানিসহ প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা দিতে পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তা ও ৫ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। এমনকি জেলায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ক্ষুদ্র-নৃ- গোষ্ঠী, জেলে, সুইপার, কামার ও হিজরাদের তালিকা করে তাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়।
শেরপুরে দায়িত্ব পালনে ২ বছর পূর্তি প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক, নেই কোন অস্থিরতা, আর সমাজকে সুন্দর করার উদ্যোগে পাওয়া যায় ব্যাপক সাড়া, সেখানটায় দায়িত্ব পালনে সফলতা আসাটাই স্বাভাবিক। তবে জেলা পুলিশের কোন ভালো কাজ, সফলতা বা অর্জনগুলো সম্ভব হয়েছে জেলা পুলিশের সকল সদস্যের পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতাসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সহযোগিতার কারণেই। এজন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, কেবল সফলতা নয়, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। আগামী দিনে আমরা যেন সকলের সহযোগিতা ও উদারতায় সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারি, সে চেষ্টাও থাকবে। সর্বোপরি তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে শেরপুরবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানান।