মির্জা আজমের প্রচেষ্টায় ২১০ কোটি টাকা ব্যায়ে অত্যাধুনিক হচ্ছে জামালপুর জেলা কারাগার

প্রকাশিত: ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ২০, ২০২০

জামালপুর প্রতিনিধি ॥ বদলে যাচ্ছে জামালপুর জেলা কারাগার। ৬ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন নতুন কারাগার ভবনসহ নানা স্থাপনা হতে যাচ্ছে।
পুরনো এই কারাগারের প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা এবং নারী, পুরুষ ও কিশোর বন্দিদের ওয়ার্ড নির্মাণসহ ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জামালপুর জেলা কারাগার পুনর্র্নিমাণ নামের একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় উঠছে আগামী ২১ জুন রবিবার।
প্রকল্পটি অনুমোদন হতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে।
জামালপুর গণপুর্ত বিভাগ অফিস সুত্র জানায়, ১৮৯৯ সালে জামালপুর জেলা কারাগার চালু হয় উপ কারাগার হিসেবে। ১৯৮৮ সালে জেলা কারাগার হিসেবে উন্নীত হয়। ১২১ বছরের পুরনো ঝুঁকিপুর্ণ ভবনগুলোতে কার্যক্রম চলছে কারাগারটির। এসব ভবনে ২৯১ জন পুরুষ ও ১৬ জন মহিলা মিলে ৩০৭ জন থাকার নিয়ম থাকলেও থাকছে আরো অধিক বন্দি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ভবনগুলো ব্যবহারের অযোগ্য ঘোষনা করেছে গণপুর্ত বিভাগ অনেক আগেই। ভবনগুলো ও স্থাপনাসমুহ মেরামত,সংস্কার ও পুণ:নির্মান অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সালে মন্ত্রী পরিষদের প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সে বছরে মন্ত্রী পরিষদের দ্বিতীয় সভায় “পরীক্ষা নিরিক্ষাক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যমান জরাজীর্ণ কারাগারের সংস্কার ও নতুন কারাগার নির্মাণ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে” শীর্ষক প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেন। সেই প্রেক্ষিতে সময়ের প্রয়োজনে চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি প্রায় ১২১ বছরের পুরনো এই জামালপুর জেলা কারাগারের উন্নয়নের বিশেষ উদ্যোগ নেন। তারই প্রচেষ্টায় স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রণায়ের আওতাধীন কারা অধিদপ্তর ‘জামালপুর জেলা কারাগারের অধিকাংশ ভবনই জরাজীর্ণ হওয়ায় কারাগারের বর্তমান অবস্থান ঠিক রেখেই এর সম্প্রসারন,আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য “জামালপুর জেলা কারাগার পুণ:নির্মান’ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে ২৮ মার্চ ২০১৭ সালে তৎকালিন কারা মহাপরিদর্শক জামালপুর জেলা কারাগার পরিদর্শন করেছেন।
জামালপুর গণপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ জানান, গৃহায়ন ও গনপুর্ত মন্ত্রনালয়ের স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশায় ভূমি উন্নয়ন, বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ব্যারাক (পুরুষ) নির্মাণ, পুরুষ শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দি ও কিশোর বন্দি ওয়ার্ড নির্মাণ, পুরুষ বন্দি হাসপাতাল, মানসিকভাবে অসুস্থ বন্দি ওয়ার্ড, মা বন্দিদের জন্য ওয়ার্ড ও শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টার, মহিলা বন্দিদের ওয়ার্কশেড ও বিনোদন সেন্টার, মহিলা জেল স্কুল, মহিলা শ্রেণিপ্রাপ্ত ও কিশোরী বন্দি ওয়ার্ড, মহিলা বন্দি সেল, সাক্ষাতকার ব্লক, প্রশাসনিক ভবন, ব্যাচেলর অফিসার্স কোয়াটার, ৮০০ বর্গফুট আয়তনের একটি এবং ৬৫০ বর্গফুট আয়তনের দুটি আবাসিক কোয়াটার নির্মাণ, ওয়ার্কশেড, স্টোর, লন্ড্রি এবং সেলুন, দর্শনার্থীদের অপেক্ষাগার, এমআই ইউনিটসহ ৭৫ জনের পুরুষ ব্যারাক ভবন, সীমানা প্রাচীর, পেরিমিটার দেয়াল, সেগ্রিগেশন দেয়াল, আরসিসি ওয়াকওয়ে, পাম্প হাউজ, ক্যান্টিন, প্যারেড গ্রাউন্ডসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ এবং সোয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি), পুকুর খনন, লিফট, সৌরবিদ্যুৎ, বনায়ন, যানবাহন ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয়, জেল হাসপাতাল ও নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি, বহির্বিভাগের চারদিকে বিদ্যুতায়ন, বাইরে পানি সরবরাহ, অন্যান্য অফিস সরঞ্জামাদি, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন স্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, প্রস্তাবিত নতুন এই প্রকল্পে জামালপুর কারাগারের পুরাতন অবকাঠামো বলতে আর কিছুই থাকবে না। সবকিছুই করা হবে নতুন করে হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মির্জা আজম এমপি বলেছেন, ব্রিটিশ আমলে গড়া পুরনো জরাজীর্ণ কারাগারটি ৬তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মিত হতে যাচ্ছে। থাকছে অত্যাধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে কারাগার আর কারাগার থাকবেনা বন্দিদের সংশোধনের পাঠশালায় পরিনত হবে।
আশারবানী শুনিয়ে তিনি আরও বলেন, জামালপুর জেলার উন্নয়নের এক নতুন যুগে অবস্থান করছে। জেলায় অন্তত পক্ষে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বেশ কিছু প্রকল্প দৃশ্যমান হয়েছে, অনেক প্রকল্প দৃশ্যমান হওয়ার পথে রয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে ৬৪টি জেলার মধ্যে ১০টি উন্নত জেলার তালিকায় জামালপুর জেলাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে জামালপুর জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হতে যাচ্ছে।
জামালপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মকলেছুর রহমান বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঝুকিপুর্ণ ভবনে বন্দীরা জীবনেব ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তেমনি আমরাও ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। পুণ:নির্মাণ প্রকল্পটি পাশ হলে অত্যাধুনিক কারাগারে বন্দিদের দীর্ঘদিনের দূর্ভোগ লাঘব হবে।