জামালপুরে বন্যার পানিতে ভেসে গেলো কৃষক মজনুর স্বপ্ন অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৬:১১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২০ জামালপুর প্রতিনিধি ॥ খড়-কুটার মত বানের পানিতে ভেসে গেলো জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ধনতলা গ্রামের তিন সন্তানের জনক আবু তালেব মজনুর স্বপ্ন। ৪ জুলাই শনিবার দুপুরে জেলার ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ধনতলা গ্রামের এক কৃষক তার বাড়ির পাশে কিছু হাঁসকে খাবার দিচ্ছিলো। তিনি জানান, অনেক কষ্টের হাঁসগুলা বানের পানিতে ভেসে গেছে। অনেক কষ্টে ধার দেনা করে জাল কিনে কিছু হাঁস আটকে রাখছি। এসব কথা বলার পরে তার সাথে পরিচয় হয়। তিনি হলেন আবু তালেব মজনু। পেশায় একজন কৃষক। সে তিন সন্তানের জনক। স্ত্রী, এক ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। নিজের সামন্য জমি আর অন্যের খেতে দিন মজুরের কাজ করে কোন রকমে জীবন কাটছিলো কৃষক মজনুর। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে মুনমুন আক্তার বেলগাছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। মেজো মেয়ে মুনজিলা আক্তার পড়ালেখা করে ইসলামপুর উপজেলার জারুলতলা দাখিল মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেনীতে আর ছেলে মাহাবুর রহমানের বয়স ৪ বছর। সে এখনো পড়ালেখা শুরু করেনি। কৃষক বাবা স্বপ্ন মেয়ে ২টিকে আর ছেলেটিকে মানুষের মত করে মানুষ করার। তারা যেন একদিন কৃষক বাবার স্বপ্ন পূরন করে বাবার মুখ উজ্জল করতে পারে। এক সময় যেন তারা বাবার পাশে দাঁড়াতে পারে। কৃষক আবু তালেব মজনু তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি মেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে ও সংসারের চাহিদা মেটাতে নিজ বাড়িতে একটি হাঁসের খামার করেন। অনেক কষ্টে কোন রকমে তিনি বাড়িতে একটি সে ঘর করে সেখানে ৮শ হাঁসের বাচ্চা নিয়ে লালন-পালন করা শুরু করেন। বাচ্চাগুলো দেখতে দেখতে মোটামুটি বড় হয়ে উঠে। এতে ঘর তৈরি, বাচ্চা কেনা, ভ্যাকসিন, হাঁসের খাবারসহ তার প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়। বাচ্চাগুলো তার বাড়ির পাশের খেতে বিচরন করে বড় হয়ে উঠছে। সকালে ঘর খুলে দিলে হাঁসের বাচ্চাগুলো তাদের খাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়ে ধান কাটার পরে খালি পড়ে থাকা খেতে। সেখানে থেকে কিছুক্ষন পর পর বাড়িতে এসে খাবার খেয়ে আবার চলে যায় সেখানে। এমনিভাবে চলছিলো তাদের দিন। হঠাৎ করে গত ১২ দিন আগে চলে আসে আগাম বন্যা। যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। তখনো কৃষক মজনুর খামারের হাঁসগুলো ছিলো উন্মুক্ত। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে স্রোত। সেই স্রোতে ভেসে নিয়ে যায় কৃষক মজনুর খামারের হাঁস। বানের পানিতে ভেসে যায় কৃষক মজনুর প্রায় ৪ শতাধিক হাঁস। সাথে সাথে ভেসে যায় কৃষক আবু তালেব মজনুর স্বপ্ন। একদিকে বন্যায় তলিয়ে গেছে তার ফসল আর অন্য দিকে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তার অনেক কষ্টের তৈরি খামারের হাঁস। অনেক কষ্টে ধার-দেনা করে কিছু জাল কিনে কোন রকমে কিছু হাঁম সে আটকে রেখেছে। তার মধ্য থেকে খাদ্য অভাবে প্রায় ৭০টি হাঁস আবার মরেও গেছে। খেতখামারে পানি থাকায় আর ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়াই কৃষক মজনু পড়েছে বিপাকে। নিজের যে যত সামান্য ফসল ছিলো তাও আগাম বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। খেতখামার থেকে পানি না নামলে অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজও করতে পারছে না। এমনাবস্থায় দুই মেয়ের পড়ালেখার খরচ আর নিজেদের খাবারের পাশাপাশি হাঁসের খাবার যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক মজনু। এখন সে নিজেদের খাবার যোগাবে নাকি হাঁসের খাবার যোগাবে। তার স্বপ্ন ছিলো হাঁসগুলো বড় হলে একদিন ডিম আসবে। সেই ডিম বিক্রি করে মেয়ে দুইজনের পড়ালেখার খরচ, সংসারের চাহিদা মেটানো আর ছেলেটাকে স্কুলে ভর্তি করা সবই হবে খুব সহজেই। তাদের সে মানুষের মত মানুষ করার স্বপ্ন দেখেছিলো। এ স্বপ্ন নিয়েই কৃষক মজনু খুব কষ্টে তার বাড়িতে খামার বানিয়েছিলো। মজনু কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার আর ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করা হবে না। আমি এখন কি দিয়ে তাদের লেখা-পড়ার খরচ যোগাবো। আজ তার সব স্বপ্ন বানের পানিতে ভেসে গেছে। এই অবস্থায় সরকারি সহযোগিতাই পারে কৃষক মজনুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। এমনি প্রত্যাশা কৃষক মজনুরও। সরেজমিনে ইসলামপুর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায় নানা রকম সমস্যা। বন্যা প্লাবিত এলাকায় বন্যার পানি কমে গেলেও সমস্যা কমেনি মানুষের। বন্যার কারনে পানিবাহীত বিভিন্ন রোগ, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট, খাবারের সঙ্কট, রাস্তা-ঘাটের ভাঙন, ফসলি জমির ফসল নষ্ট, মাছের খামারীদের মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া, গবাদি পশুর খাবার সঙ্কট। এমন নানা রকম সমস্যার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের। Related posts:অন্তঃসত্ত্বা নারীকে তিন দিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণশেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় লড়ি হেলপার নিহত ॥ আহত ২ময়মনসিংহের ফুলপুরে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার Post Views: ৩৬৭ SHARES সারা বাংলা বিষয়: