বিদেশে যাচ্ছে শেরপুরের গারো পাহাড়ের মধু অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০২১ বিশেষ প্রতিনিধি : শেরপুরের সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলার গারো পাহাড় ঘেরা বন বাগানে বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ শুরু হয়েছে। শিক্ষিত বেকাররা সারা বছরব্যাপী ওইসব এলাকায় মধু উৎপাদন করছে। মৌ চাষীরা বলছেন, এর মাধ্যমে যেমন কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে গেছে অন্যদিকে স্বাদে অনন্য পাহাড়ি ফুলের খাঁটি মধু বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আরও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছে বন বিভাগ। বন বিভাগ, মৌচাষী ও সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে নানা ধরণের ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ রোপন করা হয়। ফলে এখন সারা বছরই পাহাড়ে অনেক বৃক্ষ ছেয়ে থাকে ফুলে ফুলে। এছাড়া ভারতের সীমানা দিয়েও রয়েছে অনেক ফুল ও ফলের বাগান। শিক্ষিত বেকার যুবকরা এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাক্সে মৌচাষের মাধ্যমে মধু আহরণ শুরু করে কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে নেয়। অল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন মধু চাষে আগ্রহীর সংখ্যাও বাড়ছে। ঝিনাইগাতীর পানবড় গ্রামের যুবক কানরাম চন্দ্র কোচ। তিনি দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে একটি এনজিও থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন মৌ চাষ। পাহাড়ি বাগানের ফাঁকে ফাঁকে সারি সারি করে বসান মৌমাছির বাক্স। অল্পদিনেই পান সফলতা। কানরাম বলেন, আমরা যে মধু সংগ্রহ করছি তা বন ফুলের মধু। এই মধু অনেক সুস্বাদু। এ কারণে এর চাহিদাটাও অনেক বেশী। স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি শেষে এই মধু এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতিমণ মধু ২২ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০ বছর আগে মধুর ব্যবসা করতেন একই গ্রামের আকমল মিয়া। তিনি জানান, মধু সংগ্রহ করার মতো যুতসই জায়গা না পাওয়ায় এত দিন ব্যবসা বন্ধ রাখেন। এখন পাহাড়ে মধু চাষে কানরামের সফলতা দেখে তিনিও শুরু করেছেন মৌ চাষ। মধু উৎপাদনের খামারে কাজ পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। ষাটোর্ধ্ব খামার শ্রমিক হায়দার আলী বলেন, বাড়ির পাশের খামারে কাজ পেয়েছি। প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা বেতন পাই। ওই টাকায় বউ, ছেলে ও মেয়ে নিয়ে ভালো আছি। শ্রীবরদীর ভেলুয়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আওয়াল বলেন, শেরপুরের সীমান্তের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বন বাগান। এসব বাগানে অর্ধশত মৌচাষী মধুর আহরণ করছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ পেশায় হাজারো তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। নালিতাবাড়ীর গণমাধ্যমকর্মী মঞ্জুরুল আহসান বলেন, আমাদের এই পাহাড়ি অঞ্চলে এক সময় মধু চাষ হতো না। এখন মৌচাষিরা পাহাড়ে বিপুল পরিমাণ মধু উৎপাদন করছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে পাহাড়ে মধু চাষে বিল্পব ঘটানো সম্ভব। ক্যাপ ছাড়া মধু তাপের সাহায্যে পিউরিফাই করতে হয় উল্লেখ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, মৌমাছি সারা দিন মধু সংগ্রহ করার পর রাতে ওই মধুতে তার পাখা প্রতি সেকেন্ডে ২০০ বার করে নাড়ায়। এভাবে ১২-১৪ দিন পর মধু পারফেক্ট হয়। এরপর মধু ক্যাপ করে সংরক্ষণ করা হয়। এর সুবিধা হলো এ মধুতে সহজে ফাঙ্গাস ও দুর্গন্ধ হবেনা। তাই ক্যাপকৃত মধুর বাজারমূল্য বেশী। গারো পাহাড়ে উৎপাদিত মধুর প্রায় পুরোটাই ক্যাপকৃত আর এর গুণগত মানও অতুলনীয় বলে তিনি জানান। নালিতাবাড়ীর মধুটিলা রেঞ্জ অফিসার আব্দুল করিম বলেন, গারো পাহাড়ের বনাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকারের ফুল জন্মে আর সেখান থেকেই মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। তাই বন মধু চাষের উপযুক্ত স্থান। এখানে কেউ মৌচাষ করে মধু উৎপাদন করতে চাইলে বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে তা করতে পারে। এর মাধ্যমে আরও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। Related posts:মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নেত্রকোনা চিত্র প্রদর্শনীঝিনাইগাতীতে উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিতঝিনাইগাতীতে ২৪ বোতল ভারতীয় মদসহ গ্রেফতার ১ Post Views: ১৫৯ SHARES শেরপুর বিষয়: