নাকুগাঁওয়ের শ্রমিকরা তৃতীয় দিনেও কাজে ফেরেননি

প্রকাশিত: ১:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২

‘মেলা দিন বন্দরে কাম করি, কিন্তু আমাগো জীবনে কোনো উন্নয়ন নাই’

নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দরের শ্রমিক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মেলা দিন বন্দরে কাম করি। কিন্তু আমাগো জীবনে কোনো উন্নয়ন নাই। আমরা মেলা কষ্টের কাম করি। বড় বড় পাথর নামাই। আগে ২০ থেকে ৩০ কেজির পাথর আইত। এহন তো ২০০ থেকে ৩০০ কেজির পাথর আহে। ২০ জনে মিইল্লা পাথর নড়াবার পাই না।’
মালিকরা যদি তাদের দিকে একটু সুনজর দিতেন- এই আক্ষেপ তার কণ্ঠেও। বলেন, ‘মালিকরা যদি আমগর দিক এল্লা খেয়াল রাখত। ১ টাকা কইরা বাড়লে তাও পোলাপান নিয়া চাইড্ডা ডাইল ভাত খাবার পামু।’
পাথর লোড-আনলোডে সিএফটিপ্রতি এক টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে তৃতীয় দিনেও কাজে ফেরেননি শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরের শ্রমিকরা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলছে তাদের এই কর্মসূচি। ফলে তিন দিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে বন্দরের লোড-আনলোডের কাজ। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের কার্যক্রম।
শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, পাথর লোড-আনলোড করে এখানকার শ্রমিকরা যে টাকা পান, বর্তমান ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই তারা এক টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। দফায় দফায় চিঠি চালাচালির পর মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়। মালিক সমিতির নেতারা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এ সময় অতিবাহিত হলেও এর সুরাহা হয়নি।


শ্রমিকরা বর্তমানে দৈনিক হাজিরায় প্রতি সিএফটি পাথর লোড-আনলোডে মজুরি পান ৩ টাকা। ১ টাকা বাড়িয়ে ৪ টাকা করার দাবির মুখে মালিকপক্ষ বলছে, তারা ৫০ পয়সা বাড়াতে রাজি আছেন; তাও শ্রমিকরা মাথায় নিয়ে পাথর লোড-আনলোড করলে। মেশিনে লোড-আনলোড হলে এক পয়সাও বাড়াবেন না মালিকরা।
শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ বাপু। খুব কষ্ট করে দিন পার করি। বড় বড় পাথর গাড়ি থেকে নামাতে হয়। পাথর নামাতে গিয়ে আমরা অনেকে আহতও হয়। আমার পায়ে কয়েক জায়গায় ভাঙা আছে। এর মধ্যে আবার পাথর নামানোর কাজই করি।’
আক্ষেপ করে বলেন ‘কী করমু? এই কাজ কইরা এহন আর অন্য কাজ করবার পাই না। মালিকরা যদি আমগরে ১টা টাকা বাড়ায় দিত আমাগর জন্যে ভালো হতো। জানেনই তো সব জিনিসের দাম বেশি।’
লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলম মিয়া বলেন, ‘আমরা আসলে ১ টাকা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছি। দাবি মেনে নিলেই কর্মবিরতি স্থগিত হবে, তার আগে নয়।
‘মালিকরা আট আনা দিতে চায়। তারাও তো জানে সব জিনিসের দাম বেশি। বন্দরে ট্রাকের ভাড়া বাড়ছে, তাইলে আমাগো মূল্য বাড়বে না কেন? আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলবে।’
বন্দরের ডিপো মালিক রুস্তম আলী বলেন, ‘এমনিতেই এই বন্দরে ঠিকমতো মাল আসে না। এখন শ্রমিকরা যদি এমন কর্মবিরতি দেয়, তাহলে তো সব পণ্য আটকে থাকবে। লোড-আনলোড না দিলে পণ্য বেচাকেনা করাও মুশকিল। কাজ বন্ধ থাকায় আমরা মালিকরাও সমস্যায় পড়েছি। আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়বে।’
বন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘আমরা শত সমস্যা থাকার পরও সিএফটিপ্রতি ৮ আনা করে বাড়ানোর কথা শ্রমিকদের জানিয়ে দিয়েছিলাম। তারা শুক্রবার সন্ধ্যায় আমাদের জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি।
‘আমরা চাই শ্রমিকরা মেশিন না ব্যবহার করে পাথর লোড-আনলোড করুক। মেশিন ব্যবহার করলে বন্দরের যেমন ক্ষতি, পাথরেরও তেমন ক্ষতি। মেশিন ব্যবহার করে পাথর লোড-আনলোড করলে আমরা তিন টাকার এক টাকাও বেশি দিব না। আমরা মাথা দিয়ে পাথর লোড-আনলোড করলে ৫০ পয়সা বেশি দিতে রাজি। কারণ মেশিন ব্যবহার করলে শ্রমিক কম লাগে। ফলে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে।’