হাফসা ও রাসেলের পাশে ডিসি, তারাও দিলেন প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ৯:৫৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক : মেধাবী শিক্ষার্থী হাফসা আক্তার রিপা ও মো. রাসেল মিয়া। অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে পড়াশুনা করে হাফসার সুযোগ পেয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যদিকে রাসেল মিয়া সুযোগ পেয়েছেন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে।

কিন্তু পরিবারের যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে তাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন মনে হতো। কিন্তু তাদের স্বপ্নকে বাস্তব করলেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।

৬ নভেম্বর বুধবার বিকেলে হাফসা রিপা ও মো. রাসেল মিয়াকে তার কার্যালয়ে ডেকে এনে করেছেন ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা এবং বলেছেন মন নিয়ে পড়াশুনা করে দেশের জন্য কাজ করার।

জানা যায়, মেধাবী হাফসা রিপা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৌরসভার জামতলার বাসিন্দা। তিনি সিলেট বোর্ডের অধীনে ২০১৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় এ ইউনিটে ৩৬তম স্থান অর্জন করেন। হাফসার বাবা একজন অটোচালক এবং মা গৃহিনী। অর্থে অভাবে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভর্তি হতে পারছিলেন না।

অন্যদিকে মেধাবী শিক্ষার্থী রাসেল মিয়া বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট (দক্ষিণ) ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামের মো. মোজাম্মেল হকের ছেলে। শত কষ্টের মাঝেও পড়াশুনা চালিয়ে তিনি এবার পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না। তার সাত ভাই বোনের মধ্যে বতর্মানে একজন কলেজে, দুইজন প্রাইমারি স্কুলে এবং একজন হাইস্কুলে অধ্যয়নরত।

তার বাবা একজন মৎস্যজীবী। বিগত ২০১৭ সালে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ এবং ২০১৯ সালে এমসি কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

Sunamganj

জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে দুজনেই। তারা জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে পড়াশুনা করে অবহেলিত মানুষের জন্য সব সময় কাজ করে যাবে।

মেধাবী শিক্ষার্থী হাফসা আক্তার রিপা জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবা খুব কষ্ট করে আমাদের পড়াশুনা করিয়েছেন। আমি আমার পড়াশুনার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ৩৬তম হয়েও আমার পড়াশুনা অনিশ্চিত ছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ স্যার আমাকে যেভাবে সাহায্য করেছেন আমি কোনোদিন ভুলবো না।

মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া মো. রাসেল মিয়া বলেন, আমার বাবা একজন মৎস্যজীবী। উনি আমাদের বড় পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মানুষ। আমি অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করেছি এবং ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছি ডাক্তার হওয়ার। আমি মেডিকেলে ভর্তি পরিক্ষার মাধ্যমে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম কিন্ত টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলাম না। আজকে জেলা প্রশাসক স্যার আমাকে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমিও স্যারকে বলে এসেছি ডাক্তার হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, বর্তমান সরকার সব সময় শিক্ষাকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা চাই কোনো শিক্ষার্থীর যেন পড়াশুনা বন্ধ না হয়ে যায়। হাফসা ও রাসেল আমাকে তাদের বিষয়টি জানালে আমি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ভর্তির জন্য সহায়তা করি। আমি তাদের বলেছি কোনো পরিস্থিতিতে যেন পড়াশুনা বন্ধ না করে এবং পড়াশুনা করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে।