শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ॥ পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ

প্রকাশিত: ১০:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেরপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার চরাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওইসব এলাকার ১১ হাজার পরিবারের অন্ততঃ অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পোড়ারদোকান ও শিমুলতলীতে দু’টি কজওয়ে দিয়ে ৭ ফুট উচু হয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় শেরপুরের সাথে যমুনা সারকারখানাসহ উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সর্ম্পূণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে গত ৫ দিন যাবত। এছাড়াও বিভিন্ন কাঁচা-পাকা সড়কে পানি উঠায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। পাটের আবাদ ও আমন ধানের বীজতলা পানির নীচে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে শতশত একর সবজি ক্ষেত। বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে সবজির। চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের কুলুরচর ব্যাপারী পাড়া ও নতুনচরের কয়েকশ পরিবার জামালপুর শহর রক্ষা বাধে ও স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানির বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২ সে.মি উপর দিয়ে বইছে। এ অঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আরও অবনতি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদ সীমার ৫০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এ বন্যার স্থায়িত্ব ২ সপ্তাহ হবে বলে ধারণা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ৫ দিনে সদর উপজেলার কামারেরচর, চরপক্ষীমারী ও বলাইয়েরচর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরমোচারিয়া ও চরশেরপুর ইউনিয়নের গ্রামেও পানি ঢুকেছে। সদর উপজেলার বিশাল চরাঞ্চল এখন বন্যা কবলিত। নকলা উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় বাড়ছে পানি। নদীর দু’পাশ ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। ২ দিনের বর্ষণে সীমান্ত উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার নদী মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই, চেল্লাখালির পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে অতি বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে যে কোন সময় আক্রান্ত হতে পারে সীমান্ত অঞ্চল।
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, ১শ হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষেত, ১৫ হেক্টর পাটক্ষেত, আমন ধানের বীজতলা ২৫ হেক্টর ও ২০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়নি। পানি কমলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান জানান, বন্যায় রেহাই অস্টাধর গ্রামে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি জন্য বলা হয়েছে।
শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন জানান, আপাতত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
শেরপুর-জামালপুর জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, অতি বর্ষণ শুরু হওয়ায় জেলার পার্শ্ববর্তী যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এর ফলে আগামীকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।