প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরেছে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা

প্রকাশিত: ৮:০৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার (জামালপুর) ॥ করোনা আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল তার পুরোনো চেহারায় ফিরেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগীদের পদচারণায় মুখরিত হাসপাতাল চত্ত্বর। চিকিৎসা সেবা নিতে প্রতিনিয়ত আসছে রোগী। চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষানবিশদের কর্মব্যস্তায় প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে।
গত ৫ এপ্রিল জামালপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই গোটা জেলায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে স্থবির হয়ে পরে পুরো জেলা। একের পর এক হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীরা করোনায় আক্রান্ত হতে শুরু করে। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা মহামারি প্রতিরোধে বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহন করায় হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে বেশ দূরত্বের সৃষ্টি হয়।
সাধারন রোগীরা ওই সময়টাতে হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে সেবা নিতে গিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন। এতে করে জন মনে কারোনাকালীন সময় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় না বলে ধারনা সৃষ্টি হওয়ায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে যায়।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগে হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ছিলো ২৪ হাজার ৭৬জন,পরের মাস ফেব্রুয়ারীতে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৩৭২জন। আবার মার্চ মাসে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৪৫২ জন হলেও পরের মাস থেকে বর্হিঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা ক্রমেই কমতে থাকে।
মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা লুৎফর রহমান জানান, মে মাসের শুরুর দিকে হাসপাতালে এসে বর্হিঃবিভাগে ডাক্তার না পেয়ে হতাশ হয়েছিলাম। কেন না হাসপাতালের কোন কক্ষেই তখন ডাক্তার ছিলো না। জানতে পারলাম করোনা আতঙ্কের কারনে কোন ডাক্তারই হাসপাতালে আসছে না। বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করে পরে বাড়ি ফিরে যাই। আজ হাসপাতালে এসে ডাক্তার পেয়ে বেশ ভাল লাগলো।
এদিকে প্রতিদিনই হাসপাতালের বুথ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠাচ্ছে৷ জামালপুর ল্যাবে প্রতিদিন পরীক্ষা হচ্ছে ৷ খুব দ্রুত রোগীদেরকে পরীক্ষার ফলাফল পাচ্ছে।
সপ্তাহে সাতদিনই বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে ৷ এছাড়া শুক্রবারে কেউ নমুনা দিতে চাইলে ১২টার আগে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে প্রতিদিনই সন্ধ্যার পরে পরীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করা হচ্ছে।
জামালপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.উত্তম কুমার সরকার জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ডাক্তারদের উপস্থিতি শতভাগ। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে প্রতিদিনই নিয়মিতভাবে মেডিকেল অফিসারসহ গাইনী, নাক-কান-গলা, শিশু, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, অর্থোপেডিকস, মেডিসিন, দন্ত বিভাগের চিকিৎসকরা রোগীদেরকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও এ হাসপাতলে বর্হিঃবিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি সহকারী অধ্যাপক ও কনসালটেন্ট ডাক্তারগন রোগীদেরকে নিয়মিতভাবে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, করোনকালী সময়েও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা স্বভাবিক ছিলো। বর্তমানে এ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে প্রতিদিনই আড়াই’শ থেকে তিন’শ রোগী ভর্তি হচ্ছে। তিনি বলেন করোনাকালীন সময়ে এই হাসপাতালে অনেক ডাক্তার, নার্স ও ওয়াডবয় রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সবার মধ্যেই করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে বর্তমানে এই ভয় কেটে গেছে। হাসপাতালে এখন সকল বিভাগেই রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি রোগীদেরকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নেয়ার আহ্বান জানান।