নেত্রকোনার কলমাকান্দা সীমান্তে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, মে ৩, ২০২৩ নেত্রকোনার কলমাকান্দা সীমান্তের পাহাড়ি টিলাঘেরা পাঁচপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়ার ময়লাযুক্ত ঘোলা পানি, আর টিলার নিচে তিন চাকের (চাক্কি) তৈরি অগভীর কূপের ময়লা পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের শতাধিক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যায় থাকলেও তাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। সীমান্তের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সচ্ছল পরিবারের লোকজন প্রয়োজনমতো একাধিক নলকূপ স্থাপন করে পানির সংকট মেটায়। কিন্তু দিন এনে দিন খায় এমন দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর পক্ষে তা সম্ভব হয় না। এক বা একাধিক বাড়িতেই নয়, অনেক পাড়ায়ই কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। এ কারণে দূর থেকে পানি এনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। সীমান্তের রংছাতি ইউনিয়নের চন্দ্রডিঙ্গা, পাঁচগাঁও, সন্নাসীপাড়া, জাকিরপাড়া, মনগড়া খারনৈ ইউনিয়নের ভাষাণকুড়া, কচুগড়া, বিশ্বনাথপুর, রানীগাঁও, খারনৈ, গোবিন্দপুর লেঙ্গুরা ইউনিয়নের চেংগ্নী, গোপালবাড়ী, ফুলবাড়ী, কালাপানি, কাঠাবাড়িসহ আরও কিছু গ্রামের অন্তত ৩০ ব্যক্তি বলেন, একসময় মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়ার ময়লাযুক্ত পানিই ছেঁকে কোনো রকম পরিষ্কার করে পান করতেন। কিন্তু এখন ছড়াগুলোও শুকিয়ে গেছে। কয়েকটি বাড়িতে গভীর নলকূপ থাকলেও মাত্রাতিরিক্ত আয়রনের কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অনেকেই নিরুপায় হয়ে বাড়ি থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে ছড়ার পানি ছেঁকে পান করছেন। আবার অনেকে তিনটি পাকা চাকায় কোনো রকম একটি কূয়া তৈরি করে খাবারসহ ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে লেঙ্গুরা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চেংগ্নী গ্রামের হতদরিদ্র পাঁচ পাড়ার লোকজনের জন্য কোনো নলকূপ না থাকায় তাদের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি। সচ্ছল পরিবারের লোকজন সুবিধামতো নিজ নিজ বাড়িতে একাধিক টিউবওয়েল বসালেও দরিদ্র লোকজন দিনযাপন করছেন ময়লা পানি পান করেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার বলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। লেঙ্গুরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের টিলাঘেরা চেংগ্নীর টেংরা টিলাপাড়া, বাঙ চাকুয়া, বাতানগ্রী, কনকোণা, ধলধলার লোকজন ১০ থেকে ১২ বছর আগে নির্মিত একটি কুয়া থেকে খাবার ও অন্য প্রয়োজনের জন্য ময়লা পানি সংগ্রহ করেন। বাতানগ্রী পাড়ার ফাতেমা সাংমা (৬৮) জানান, এই তিন চাকার কুয়ায় কার্তিক থেকে চৈত্র পর্যন্ত ছয় মাস পানিই থাকে না। বাকি ছয় মাস চেংগ্নী ছড়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। ছড়ার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে অনুরোধ করে ছড়ার উৎস মুখ থেকেও পানি সংগ্রহ করে এনে জীবন ধারণ করা হয়। সেখানেও মাঝে মাঝে ওপার থেকে নেমে আসে বন্যহাতির পাল। একই গ্রামের টেংরা টিলাপাড়ার জেমদিনী রাকসাম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘৫৩ বছর বয়স হয়েছে। একদিনও বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারলাম না। সারা জীবন ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করে খেয়ে গেলাম।’ চেংগ্নী মাতৃমণ্ডলীর পাস্টার গিজিয়ন চিসিম (৬৮) জানান, কলমাকান্দা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে শুরু করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ অনেকের কাছে ধরনা দিয়েও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা যায়নি। চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের রাজরানী (৩২) বলেন, দিনে দু-তিনবার প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে পাহাড়ের ছড়ার পাশে গর্ত করে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। একই গ্রামের সুদীপ্ত হাজং বলেন, চন্দ্রডিঙ্গার আশপাশের অন্তত ৮টি গ্রামের লোকজন সীমান্তের জিরোলাইন থেকে তেলের টিন, কলসি বা বালতিতে করে পানি বয়ে আনেন। লেঙ্গুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ভুইয়া জানান, চেংগ্নী এলাকায় পানির দুর্ভোগের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। আসলে ওখানে প্রায় হাজার ফুট গভীর নলকূপ বসাতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মাটির নিচ থেকে পাথর সরিয়ে যদিও বিকল্প হিসেবে একটি গভীর কুয়া বসানো যায়, কিন্তু তাতেও ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ব্যয় হবে। খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, সরাসরি উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই গ্রামগুলোতে পানির সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হবে। কলমাকান্দা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, লেঙ্গুরা ইউনিয়নের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোয় বেশকিছু গভীর কুয়া সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে। ওই অঞ্চলে পাথরের জন্য টিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয় না। তবে পাহাড়ি অঞ্চলে বেশকিছু রিংওয়েল বসানো হয়েছে। এখানো ১০টি রিংওয়েল বসানোর কাজ চলমান। Related posts:জামালপুরে বজ্রপাতে গরুসহ মহিলার মৃত্যুশেরপুরে পৃথক ঘটনায় ২ জনের আত্মহত্যাচট্টগ্রামে সহিংসতা ও আইনজীবী হত্যাকাণ্ড, যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক ৩০ Post Views: ১৪৬ SHARES সারা বাংলা বিষয়: