অগ্নি-সন্ত্রাস করে ছাড় পাচ্ছে না রাজশাহী রেঞ্জের জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা ॥ গ্রেপ্তার এড়াতে ফেরারি জীবন-যাবন নেতা-কর্মীদের অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:২২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২৩ নাশকতাকারীদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে দাবী পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের দলত্যাগ। বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জামায়াত-বিএনপির ডাকা চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে যানবাহন, ব্যক্তিগত-সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোরসহ রাজশাহী রেঞ্জের ৮টি জেলায় বিভিন্ন যানবাহন, ব্যক্তিগত ও সরকারি স্থাপনা ভাংচুর ও ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এসব ঘটনায় রাজশাহী রেঞ্জের ৮টি জেলার বিভিন্ন থানায় নাকশকাতায় জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তারে রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশ জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে পুলিশ নস্যাৎ করে দিচ্ছে নাশকতার পরিকল্পনা। পুলিশের তৎপরতার মুখে ওইসব এলাকার নাশকতা মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকছেন। ফেরারি আসামির মতো জীবনযাপন করছেন। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন পরিবার থেকে। বাড়ি ছেড়ে জোটবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন মাঠে-ময়দানে রাত পার করছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে এসব নেতাকর্মীদের অনেকেই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। কেউ কেউ দলীয় সিদ্ধান্তে বা নেতাদের নির্দেশে আর কখনো নাশকতায় জড়াবেন না জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে এলাকা ছাড়ছেন। জানা যায়, নাশকতাকারীরা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারছে না। গ্রেপ্তার এড়াতে ফেরারি আসামীর মত পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন বাগান, গরুর খামার ও নদীর পাড়ে। যার প্রভাব তাদের পরিবারের উপর পড়ছে। বগুড়া জেলার হরতাল-অবরোধের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় জামায়ত-বিএনপির দুস্কৃতিকারীরা মূলত হিট এন্ড রান (Hit and Run) কৌশলের আশ্রয় নিয়ে নাশকতা করছে। দুস্কৃতিকারীদের সকল ধরনের আগ্রাসি পরিকল্পনা প্রতিরোধে বগুড়া জেলা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম গফুরের নেতৃত্বে হরতাল অবরোধের নামে জেলার বিভিন্ন স্থানে নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়। সেই কর্মসূচির ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালায়। এমন অবস্থায় গ্রেফতার এড়াতে তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়িছাড়া। রাত যাপন করছেন বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারে। বগুড়া শহর যুবদলের আহবায়ক আহসান হাবীব মমি বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে কখনও কলাবাগান কখনও ঝোপঝাড়ে রাত কাটাচ্ছেন। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল বাছেদ জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীদের যুবক ছেলেদেরও বাড়ীতে থাকতে দিচ্ছে না পুলিশ। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার জানান, পুলিশ অযথা কাউকে হয়রানি করছে না। যারা কলাবাগান কিংবা সেচ পাম্পের ঘরে রাত কাটায় তারা মূলত সেখানে নাশকতার পরিকল্পনা করে এবং মহাসড়াকে সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বর্তমানে পুলিশ তাদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। পুলিশি গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা তাদের স্বাভাবিক এবং চলমান আন্দোলন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। নেতাকর্মীরা ধানক্ষেত, বন-জঙ্গলে এমনকি নদীতে নৌকায় রাত কাটাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির আরেক নেতা বলেন, তফশিল ঘোষনার পরে তাদের চলমান আন্দোলনের কর্মসূচী হিসেবে হরতাল ও অবরোধের পক্ষে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মশাল মিছিল বের করে বঙ্গবন্ধু সেতু-হাটিকুমরুল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিলে পুলিশ তাদের উপর লাঠি চার্জ করে এবং পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজ দেখে ওই মশাল মিছিলে অংশ গ্রহণকারী প্রত্যেক নেতা-কর্মীর বাড়ীতে গ্রেপ্তারী অভিযান পরিচালনা করছে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ। যার ফলে তারা পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ জানান, জেলা পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোন প্রকার বাধা তৈরী করছে না। তবে আন্দোলনের নামে যারা অগ্নিসংযোগ, গাড়ী ভাংচুর, ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের চেষ্টা করছে কেবলমাত্র তাদেরই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এদিকে পাবনা জেলার ঈশ^রদী উপজেলায় হরতালের নামে জামায়ত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা বেশ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই ঘটনায় ভিটিও ফুটেজ দেখে দলদুটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ঈশ^রদী থানায় অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ধানক্ষেত, নদীর তীর ও বিল অঞ্চলে রাত্রী যাপন করছে। তাদের অনেকে মহাসড়কে নির্জন স্থানে অবস্থান নিয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরে প্রচেষ্ঠাও চালাচ্ছে। তবে জেলা পুলিশের তৎপরতায় তারা (জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মী) তাদের ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পারছে না। পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা বিএনপির এক কর্মী বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে তারা যুমনা নদীর বিভিন্ন চড়ে রাত যাপন করছে। তারপরও তারা গ্রেপ্তার এড়াতে পারছে না। পুলিশ তাদের মোবাইল লোকেশন নিয়ে নদীর চড়ে গিয়েও তাদের বেশ কিছু নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। এ বিষয়ে পাবনা জেলা পুলিশ সুপার জানান, শুধুমাত্র নাশকতা মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে যা জাতীয় শান্তি এবং শৃঙ্খলা রক্ষার অংশমাত্র। আন্দোলনের নামে নাটোর জেলার জামায়ত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা বেশকিছু যানবাহন ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এসব ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় দল দুটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে নেতা-কর্মীদের চলন বিল ও তার আশেপাশের ফাঁকা জায়গাগুলোতে রাত্রী যাপনের খবর পাওয়া যায়। অনেক নেতা-কর্মীরা আবার আম ও সুপারী বাগানে ৫-৭ জনের দলে বিভক্ত হয়ে রাত্রী যাপন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাটোর সদর উপজেলার জামায়াত কর্মীর মতে সে গত ১৭ দিন যাবৎ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। মোবাইল ট্রাকিং এর ভয়ে মুঠোফোন চালু করতে পারছে না, পারছে না পরিবারের খবর নিতে। প্রায় প্রতিরাতে পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “আন্দোলনের নামে যে কোন অপতৎপরতা প্রতিরোধে জেলা পুলিশ সদা তৎপর”। রাজশাহী রেঞ্জের অন্য চারটি জেলার (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাট) জামায়াত-বিএনপির হরতাল অবরোধের নামে নাশকতা সৃষ্টিকারী নেতা-কর্মীরাও গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে। আর যারা নিজ এলকায় অবস্থান করছে তারাও গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে কৃষিজমি, নদীরপাড়, আম-লিচুর বাগান, পরিত্যক্ত মুরগির খামার ইত্যাদি জায়গায় অবস্থান এবং রাত্রী যাপন করছে। নাশকতাকাদীরে ধরতে জেলান পুলিশ প্রশাসন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ওইসব নাশকতা সৃষ্টিকারী জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে কৌশলগত বিভিন্ন পুলিশি অভিযান পরিচালনা করছে। বলে চলে এ অঞ্চলে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার জন্য কোন স্থানেই জামায়ত-বিএনপির নেতাকর্মীরা সার্বক্ষণিক একই অবস্থানে অবস্থান করতে পারছে না। যা তাদের চলমান আন্দোলনের অগ্রসরতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় বলছে, শান্তি পূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ কোন প্রকার বাধা দিচ্ছে না। আন্দোলনের নামে যারা যানবাহন, ব্যক্তিগত-সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটাচ্ছে জনগণের নিরাপত্তায় ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। Related posts:ফুলপুরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালিনকলায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিতযমুনায় জমাট বাঁধা নিম্নমানের সার রিপ্যাকিং চলছে Post Views: ১৯৬ SHARES Uncategorized বিষয়: