বিশ্ব রক্তদাতা দিবস ও রক্তদানের আদ্যোপান্ত

প্রকাশিত: ১০:০২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২০

আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ভূমিকা রাখছেন প্রথমেই তাদেরকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের আদ্যোপান্ত
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই স্লোগান নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।
প্রতিবছর ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান হয়।
এখনও বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের প্রয়োজন হলে রক্তের জন্য নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের রক্তদানের ওপর। আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্ত দান করে।
বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, ‘নিরাপদ রক্ত সরবরাহের’ মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দেয়া রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ, যেমন এইচআইভি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম।
স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদানকারী সেইসব মহৎ মানুষদের উদ্দেশেই উৎসর্গীকৃত ১৪ জুনের বিশ্ব রক্তদান দিবস। ১৪ জুন দিবসটি পালনের আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে। এদিন জন্ম হয়েছিল বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টিনারের। এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীই আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের গ্রুপ ‘এ, বি, ও, এবি’।
★ রক্ত দেওয়া নিয়ে অনেকের মনে রয়েছে ভীতি ও ভ্রান্ত ধারণা। আবার অনেকে মনে করে আমি কি রক্ত দিতে পারবো?
আবারও চিন্তা করে রক্ত দিলে নিজের শরীরের কোনো ক্ষতি হবে কি না তো? এসব সাত-পাঁচ চিন্তা করে আর রক্তদানের মত মহৎ কাজ করা হয়ে উঠেনা অনেকের । চলুন জেনে নেই কারা রক্ত দিতে পারবেন এবং কারা রক্ত দিতে পারবেন না।
যারা রক্ত দিতে পারবেনঃ-
■ ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো নিরোগ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন।
■ যাদের ওজন ৫০ কেজি বা তার বেশি (কখনো সর্বনিম্ন ছেলে ৪৮কেজি ও মেয়ে ৪৫কেজি রক্ত দিতে পারবে)
■ কোনো ব্যক্তি একবার রক্ত দেওয়ার ৪ মাস পর আবার রক্ত দিতে পারবেন।
যারা রক্ত দিতে পারবেন নাঃ-
● হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরিমাণ (পুরুষদের ন্যূনতম ১২ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং নারীদের ন্যূনতম ১১ গ্রাম/ডেসিলিটার হতে হবে) থাকলে।
★ যারা হেপাটাইটিস, এইডস, ম্যালেরিয়া বা অন্য কোন রক্তবাহিত রোগে ভুগছেন, তাদের রক্তদান করা উচিত না, কারণ সেই রক্ত রোগীকে নতুন রোগে আক্রান্ত করতে পারে।
● রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক না থাকলে রক্ত দেওয়া ওই মুহূর্তে উচিত নয়।
● শ্বাস–প্রশ্বাসজনিত রোগ, যেমন হাঁপানি বা অ্যাজমা।
● নারীদের মধ্যে যাঁরা অন্তঃসত্ত্বা ও যাঁদের ঋতুস্রাব চলছে তাঁরা রক্ত দেবেন না, সন্তান জন্মদানের এক বছরের মধ্যেও না।
● যাঁরা কিছু ওষুধ সেবন করছেন, যেমন, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি তাঁরা সে সময় রক্ত দেবেন না।
● যাঁদের বিগত ৬ মাসের মধ্যে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁরা রক্ত দেবেন না।

ইসলামের দৃষ্টিতে রক্তদান:
ইসলামি শরীয়তের মতে রক্তদান বৈধ।রক্তদান বৈধ হওয়ার ব্যাপারে শরীয়ত বিশেষজ্ঞরা যেসব যৌক্তিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তা হলো- ★ শরীরের অন্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যেমন মায়ের দুধ। এটি শিশুর প্রয়োজনে যেমন ব্যবহারযোগ্য তেমনি রক্তও অন্যের জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরি।
★ এটিতে কাটাছেঁড়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না।
★ যখন কোনো অসুস্থ ব্যাক্তির জীবননাশের আশংকা দেখা দেয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে তার শরীরে অন্যের রক্ত দেওয়া ব্যতীত বাঁচানোর কোনো পন্থা না থাকে, তখন রক্ত দিতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং এ ক্ষেত্রে ইসলাম আরো উৎসাহ দিয়েছে।
★ একজন মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।
★ এটি সদগায়ে জারিয়া,যার সওয়াব মৃত্যুর পর দান কারি পাবেন।
রক্ত কেনা বেচা করার হুকুম:রক্ত বিক্রি করা হারাম কাজ।তবে রক্তদাতা যদি বিনামূল্যে রক্ত দিতে না চান তাহলে জরুরি পরিস্থিতিতে রক্ত কেনা বৈধ হবে কিন্তু বিক্রেতার পাপ হবে। (দেখুন : মুফতি মুহাম্মদ শফি, জাওয়াহিরুল ফিকহ, খ- ২, পৃষ্ঠা ৩৮)।
অমুসরিমের রক্ত গ্রহণ ও দানের বিধানঃযেকোন ধর্মের মানুষকে রক্তদান করা জায়েজ।
অমুসলিমের রক্ত মুসলিমের শরীরে স্থানান্তর জায়েজ। মুসলিম আর অমুসলিমের রক্তে কোনো প্রভেদ নেই। কিন্তু শরিয়তসিদ্ধ কথা হলো, কাফের-ফাসেকের স্বভাবে মন্দ ও নিন্দনীয় প্রভাব রয়েছে। কারণ তারা নাপাক ও হারাম খাদ্য গ্রহণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আর এতে করে খাবারের প্রভাব রক্ত-মাংসে পড়ে। তাই সে ক্ষেত্রে অমুসলিমের মন্দ স্বভাব-চরিত্রের প্রভাব মুসলিমের স্বভাব-চরিত্রে রক্তের মাধ্যমে পরতে পারে।

লেখক-
এ এম আব্দুল ওয়াদুদ
(তরুণ সাংবাদিক)