ব্রহ্মপুত্র নদের বৃদ্ধি আব্যাহত ॥ জামালপুরে পানি বৃন্দি ১০ লাখ মানুষ অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৮:১৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২০ জামালপুর প্রতিনিধি ॥ যমুনা নদীর পানি গত তিনদিন কমলেও গতকাল রোববার দুপুর থেকে আবারো বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বিকেল ৬টায় পর্যন্ত বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি জামালপুরের পয়েন্টে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিষয়টি জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ ও পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আব্দুল মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ঝিনাই, দশআনী, জিঞ্জিরামসহ অন্যান্য শাখা নদীগুলোর পানি বাড়তে থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুর সদর উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে বন্যার পানি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামের রাস্তা, কালভার্টসহ ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। সদর উপজেলা লক্ষীরচর ইউনিয়ন ও তুলসীরচর ইউনিয়নের দুইটি ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি যা এলজিইডি মাধ্যমে নির্মিত সড়কের ঘাড়মারা ব্রীজ সংযোগ রাস্তাটি ভেঙ্গে গেছে। যার কারনে দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। লক্ষীরচর ইউনিয়নের চর যথার্থপুর, লক্ষীরচর, উজানপাড়া, ভাটিপাড়া, চর গজারিয়াসহ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লক্ষীরচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাতেম আলী তারা বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি চর এলাকায়। বন্যার পানি এ ইউনিয়নে প্রতিটি গ্রামেই প্রবেশ করেছে। যার কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সকল রাস্তা। টিকরাকান্দি চৌরাস্তা মোড় থেকে নরুন্দি যাওয়ার রাস্তাটি সম্পূর্ণ ডুবে গেছে বন্যার পানিতে। ইউনিয়নের অনেক কাঁচা রাস্তা ভেঙে পড়েছে। তুলসীরচর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নে প্রবেশের যে মূল সড়কটি তা ভেঙে গেছে। নিজ অর্থায়নে চেষ্টা করেছি রাস্তাটি রক্ষা করার জন্য। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। রাস্তাটি সংষ্কার প্রয়োজন। তা না হলে জনদূর্ভোগে পড়বে ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। জামালপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রমজান আলী বলেন, ব্রীজটি সংষ্কারের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। জামালপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় জেলা সদরসহ ৭টি উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়নে ও ৮টি পৌরসভায় বন্যা দেখা দিয়েছে। দুই লাখ ৪৬ হাজার ৫০৯ টি পরিবারের নয় লাখ ৮৭ হাজার ৫৪১ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ৪১০ মেট্টিক টন চাল, ১৯ লাখ টাকা, চার হাজার শুকনো খাবার, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্য এবং দুই লাখ টাকার গো-খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে ৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৯৭৬ জন বন্যার্ত মানুষ। বন্যা দুর্গত এলাকায় কাজ করছে ৫১টি মেডিকেল টিম। বন্যায় নয় হাজার ১৮৫ হেক্টর জমির ফসল, ২৬০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, চারটি বাঁধ, পাঁচটি ব্রীজ-কালভাট, ২৬৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৬৫৮টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চার হাজার ৪০২টি নলকূপ ও চার হাজার ৮৬৮টি ল্যাট্টিন। অপরদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় রোগ-বালাই বাড়ছে। হাত-পায়ে ঘা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ বালাইতে ভুগছে বন্যাকবলিতরা। সার্বণিক পানিতে থাকার কারণে এসব রোগ দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছে অনেকে। একদিকে যেমন আয়-রোজগার নেই। অন্যদিকে পানিবন্দি থাকায় সঠিকভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না। এতে রোগ-বালাই নিয়েই তাদের কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। ইসলামপুরের চিনাডুলী ইউনিয়নের খামারীপাড়ার বৃদ্ধা বেগম বেওয়া বলেন, রাইতে ঘুমাতে পারিনা। অনেক ব্যাথা ও চিলিক পাড়ে হাত পায়ে। মনটা আর চায়না পানিতে নামি। কি আর করার আছে পানিতে তো নামতেই হবে। হাতে টাহা পয়সাও নাই ডাক্তার দেহাবো কিভাবে। শুধু বেগম বেওয়া নন, জেলার বন্যা কবলিত এলাকার হাজার হাজার মানুষ এসব রোগে ভুগছেন। নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের উলিয়া বাঁধের উপরে আশ্রয় নেয়া আসলাম, জহুরা বেগম, বিলকিছ বেগম, চিনাডুলী ইউনিয়নের ছহিনা খাতুন, মলিছন হাজেরা একই কথা বলেন।জহুরা বেগম বলেন, “কয়েক দিন থেকেই আমরা বানের পানিতে আছি। এই পানিই আমাদের খাইতে হয় এই পানি মধ্যেই প্রশাব পায়খানা করতে হয়। দুই দিন থেকে আমার বাচ্চাটার হাগা (পাতলা পায়খানা) হয়েছে।জেলা সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস বলেন, জেলায় আমাদের ৮০টি মেডিকেল টিম বন্যার্ত এলাকায় কাজ করছে। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।জেলার ত্রাণ ও পুনর্বসন কর্মকর্তা নায়েব আলী বলেন , এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ১৯ লাখ টাকা, ৪১০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শিশু ও গো-খাদ্য বাবদ ৪ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়ও উপ-বরাদ্দকৃত ৩ হাজার ৪০৮ দশমিক ৫৭০ মেক্ট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। Related posts:জামালপুরে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিতশেরপুরে ৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র্যাবআজ সূর্যদী গণহত্যা দিবস Post Views: ৩১৭ SHARES সারা বাংলা বিষয়: