শেরপুরের মানবতার ফেরিওয়ালা, সাবেক এমপি শ্যামলীর জন্মদিন আজ

প্রকাশিত: ৩:১১ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২৩

শেরপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি, আদরজান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, সাপ্তাহিক শ্যামলী শেরপুর ও শ্যামলীনিউজ২৪ডটকমের সম্পাদক-প্রকাশক ও শেরপুরের মানবতার ফেরিওয়ালা এ্যাডভোকেট ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলীর ৪৪তম শুভ জন্মদিন আজ। ১৯৭৯ সালের ৫ মে বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা সেলিম রেজা ও ফরিদা ইয়াসমিনের কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আজ ৫ মে শুক্রবার ৪৪ বছরে পা রাখবেন তিনি।

সাবেক এমপি শ্যামলী একাধারে বহুমাত্রিক শিল্পের প্রবক্তা, সফল নারী উদ্যোক্তা, সফল রাজনৈতিক ব্যক্তি, নারী সমাজের কাছে অনুকরণীয়।
শেরপুরের এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান এ্যাডভোকেট ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলী। পিতা প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও শ্রমিকনেতা সেলিম রেজার একমাত্র কন্যা শ্যামলী পারিবারিক সূত্রে ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের আদর্শের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। রাজধানী ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পর শেরপুরে এসে জেলা যুব মহিলা লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনের এক কঠিন সময়ে দায়িত্ব পান ওই সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৫ নভেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের ঐতিহ্যাসিক ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হোন। ২০০৯ সালে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে অংশ নিয়ে নানা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারণে হারলেও তার পরিচিতির পাশাপাশি ধাপে ধাপে বেড়ে যায় জনপ্রিয়তা। সেইসাথে পিতার মৃত্যুজনিত কারণে পরিবারসহ পৈত্রিক ব্যবসার হাল ধরায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একজন যুব ও নারী উদ্যোক্তা হিসেবেও পেয়ে যান পরিচিতি।
আর এমনই সফলতার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে শেরপুর-জামালপুর সংরক্ষিত আসনে শেরপুরের হয়ে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো সংরক্ষিত সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে শেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ, মন্দিরের উন্নয়নসহ নানা উন্নয়ন মূলক কাজ করে গেছেন তিনি। এত ঝামেলা-ব্যস্ততার পরও প্রয়াত বাবার ইচ্ছে পূরণে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভূক্ত হন এবং শেরপুর বারের সদস্যপদ গ্রহণ করেন।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও যখন নাকাল, ঠিক তখন সাধারণ ছুটি ও প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি দীর্ঘ লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র-অসহায় মানুষগুলোর জীবন চরম ওষ্ঠাগত। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বৃহত্তর মানবিকতায় নিরলসভাবে কাজ করে যাবার পরও যখন সরকার প্রধান ও তার দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে শীর্ষ ও দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের অনেকেই হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন, ঠিক তখন ব্যতিক্রমী হয়ে শেরপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় কাজ করছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলী। করোনাকালীন সময়ে দায়িত্বশীল বা জনপ্রতিনিধি না হয়েও সদর উপজেলার অসহায় হতদরিদ্র মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে হাজার হাজার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সেইসাথে করোনা পরিস্থিতিতে মানবতার সেবায় এক অনন্য ফেরীওয়ালা হিসেবে সেইসময় পেয়েছেন সুখ্যাতি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর শেরপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নসহ অপর দু’টি নির্বাচনী এলাকাতেও শ্যামলীর বিচরণ ও সহায়তা ছিল অকৃপণ। সরকারি স্বাভাবিক বরাদ্দের পরও নিজের চেষ্টা-তদবিরে অনেক এলাকায় বহু উন্নয়ন কর্মকান্ডে রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। এরপরও বরাদ্দের তুলনায় চাহিদা পূরণ সম্ভব না হলে ব্যয় করেছেন ব্যক্তিগত অর্থ। তার উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বাদ যায়নি শতশত শিক্ষা, ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও।
কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর থেকে সংরক্ষিত নারী এমপি মনোনীত হওয়ায় বাদ পড়ে যান এ্যাডভোকেট শ্যামলী। এতে তিনি নিজে যতটুকু ব্যথিত হয়েছেন, তার চেয়ে ততোধিক ব্যথিত হয়েছেন এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ, যাদের অনেকেই শ্যামলীর মানবিক সেবায় উপকৃত। কিন্তু এরপরও থেমে থাকেননি শ্যামলী। সরকারি দায়িত্বে না থেকেও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অর্থায়নে লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছেন নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ড। ঈদুল ফিতর, কোরবানীর ঈদসহ বাংলা নববর্ষ উদযাপনে যুব মহিলা লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের পাশাপাশি হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষকে করেছেন সহায়তা। কখনও বা এগিয়ে গেছেন আর্তমানবতার সেবায়, দাঁড়িয়েছেন পাশে। এরপরও দলীয় কর্মকাণ্ডসহ জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনে রেখেছেন বিশাল ভূমিকা।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে দীর্ঘ প্রায় ২ যাবত অফিস-আদালত, কল-কারখানা বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র অসহায় মানুষগুলোর সেবায় প্রথম থেকেই কাজ করছেন শ্যামলী। ফলে করোনা পরিস্থিতির প্রথমভাগে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নসহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে করোনা মোকাবেলায় জনসচেতনতা বাড়াতে অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে মাস্ক, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেন। এরপর ব্যক্তিগত তরফ থেকে দেন প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা। কেবল তাই নয়, করোনা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে রমজানে ইফতার মাহফিল বা পার্টি বন্ধ থাকায় তার তরফ থেকে নেওয়া হয় এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। আর সেই উদ্যোগের আওতায় রমজানের প্রথম দিন থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন ৫শ করে ইফতারীর প্যাকেট পর্যায়ক্রমে পৌঁছে দেওয়া হয় সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে। নিজের গড়া আদরজান ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীদের সহায়তায় প্রতিদিন দু’টি পিকআপ ভ্যানে করে অনেকটা ভ্রাম্যমাণ আকারে ওই ইফতার আয়োজন ঘরে থাকা মানুষ ছাড়াও হাট-বাজার ও পথচারী মানুষদের হাতেও পৌঁছে। এটি যেন কেবল শেরপুরে নয়, পরিবর্তিত অবস্থায় খোদ বাংলাদেশেই এক অনন্য বিরল দৃষ্টান্ত। ফলে তার এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ও আয়োজনটি এখন মানুষের মুখে মুখে। তিনি নিজেও ভাসছেন হাজার হাজার মানুষের প্রশংসায়। এছাড়া গণমাধ্যম কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী ও ইমাম-মুয়াজ্জিনদের হাতে পৌঁছে দিয়েছেন প্রায় ৩শ পিপিইসহ (প্রাইভেট প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) অন্যান্য অনুসঙ্গ।
কেবল তাই নয়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর সমাগত হওয়ায় ২১ মে থেকে ৩ দিনব্যাপী অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে নিজ হাতে বিতরণ করেছেন প্রায় ৫ সহস্রাধিক ঈদবস্ত্র। এছাড়া নানা পর্যায়ে পাঠিয়েছেন ঈদ উপহার ও আর্থিক সহায়তা। আর এ সবকিছু মিলে বিশেষ করে করোনাকালীন কঠিন পরিস্থিতিতে পুন সহায়তা অব্যাহত রাখায় তার নাম এখনও মানুষের মুখে মুখে। সেইসাথে তার নামের আগে সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে মানবতার অনন্য এক ফেরীওয়ালা হিসেবে।
এদিকে সাবেক এমপি শ্যামলীর ৪৪তম জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
আদরজান ফাউন্ডেশনের শীর্ষ কর্মকর্তা মো: ওমর ফারুক জানান, শ্যামলী আপা আমাদের শেরপুরের গর্ব। তিনি সারাক্ষণ শেরপুরের মানুষের কথা চিন্তা করেন। আজ তার ৪৪ তম জন্মদিন উপলক্ষে আদরজান ফাউন্ডেশনের পক্ষে থেকে বিভিন্ন মসজিদে দোয়া, কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিলসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।