মাহমুদ ফয়সাল‘র “ভেজা চোখ” অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯ রাত হয়তো ১২টার বেশি বাজে। ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়ে রানা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে। দেয়াল ঘড়িটা দেখার দরকার।উঠতে অলসতা লাগছে বেশ।শীতের রাত কম্বলের নীচে থেকে উঠা বেশ কষ্টের। তাছাড়া সে শোয়াটা যদি হয় ঘুমানোর জন্য তবে তো অলসতার সীমা নেই। অনেকদিন পরে ময়মনসিংহ যাবার কারনে রাত ১১ টা নাগাদ রানা খুব ব্যস্ত ছিল।কি যেন বাদ যাবার কারনে তার অস¦স্থি লাগছে,বাদ দেওয়া জিনিস টা সে অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারছেনা।বার বার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে কাজটা করা ঠিক হয়নি। ইদানিং বড্ড বেখায়ালি হয়ে যাচ্ছে। সকালের দিকে তার আন্টি তাকে ফোন করে বলে ছিলেন খুব জরুরী কাজে ময়মনসিংহ যেতে হবে, র্অধেক রাস্তা যাবার পরে ফোন আসলো আর যাবার দরকার নেই। সব গুছিয়ে রওয়ানা দেবার কারনে ফেরত আসা হয়নি। সরাসরি খালার বাসায় চলে গেল। কি কাজের জন্য যেতে বলছিলো সেটা জানার আগ্রহ বোধ করেনি একবারও। মানসিকতা ভোতা হতে চললো নাকি? সন্ধায় জানার কৌতুহল ছিলো তবে সে রেশ কাটতে বেশি সময় লাগেনি। রানা নেত্রকোণা সরকারি কলেজের ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনাতে যতটা ব্যস্ত থাকে , তার চে বেশি ব্য¯ত থাকে খেলাধুলা নিয়ে।তবে পরিবারের লোকজনের প্রতি তার মায়া একটু বেশি। বিশেষ করে ছোট বোনটার জন্য ।ছোট বোনটার নাম তামান্না।সে যেন খুব কাছের মানুষ,খুব কাছের। ৭ ভাই বোনের মাঝে রানা ২য়, বড় ভাই পড়াশোনা করেন। পরিবারের খরচের ভার তার বাবার উপর। রানার বাবা খুব আর্দশ মানুষ। কোন লোক একেবার দেখলে বুজতে পারবেন তিনি বেশ পরিশ্রমী। স্বল্প বেতনে চাকরী করেন কিন্তু আত্মবোধ ও পরিশ্রম তার কাছে প্রিয় জিনিস । পাতলা গড়নের মানুষ। জামা খুললে বুকের হাড় কটা গোনা যাবে অনায়েসেই।উনার নাম আখতার হুসেন। উনাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে তার নামটা তিনি খুব উচ্চারণ করেই বলেন মুহাম্মদ আখতার হুসাইন। উচ্চারণটা শুনে সামনের লোকটা যতটা মজা না পায়; বাবার মুখে উচ্চারণটা শুনে রানা বেশ মজা পায়। আখতার সাহেবের বুকের বাম পাশে একটা ক্ষত, ফোঁড়া হয়েছিল বেশ কদিন আগে। রানার মনে পড়ে যেদিন তার বাবা ফোঁড়ার ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন। বার বার বলছিলেন “ আল্লাহ্ গো, আল্লাহ্ গো মরে গেলাম গো”। রানার মা পাশে বসে ফোঁড়া থেকে পুঁজ বের কওে দিচ্ছিলেন। মায়ের মুখটা বার বার কুঁচকে যাচ্ছিল ।হয়তো ফোঁড়া থেকে নির্গত পুজটা দেখেই। দরজার বাম পাশটায় দাড়িয়ে দৃশ্যটা দেখছিলো রানা। বাবার চিৎকারের সাথে সাথে রানাও মুখ ভেঙচি দিচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো ব্যাথাটা তারও লাগছে।ফোঁড়া ভালো হতে বেশ কদিন লাগলেও তার পরপরই সেরে ওঠেন আখতার সাহেব।সেরে ওঠার পরে নিজের কাজে বেশ সাচ্ছন্দে কাজ করে যাচ্ছেন। রানার চোখে পৃথিবীর ভাল কয়েকটা মানুষের মাঝে তার মামা ২য় স্থান অর্জনকারী। মামার নাম ফরহাদ্ ।তিনি চাকরী করেন, বেতন মোটামুটি পান।মোটামুটি কথা বলার কারন হলো যতবার রানা তার কাছে বেতনের সংখ্যা জানতে চেয়েছেন ততবার আর্দশ একটা বুলি শুনতে হয়েছে “ পুরুষ মানুষের বেতন এবং নারীদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই; এই সামান্য কথাটা তোমাকে কতবার বলতে হবে রানা??? মাসের ৫/৬ তারিখের দিকে ফরহাদ রানাকে বলে “ কিরে বাবা কিছু টাকা লাগবে”? রানার প্রতি মাসের মুখস্থ উত্তর দিয়ে দেয় “না মামা আপাতত দরকার নাই গত মাসে যে দিছিলা সেটা এখনো রয়ে গেছে”। মামা ভেংচি কেটে বলেন তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। রানা মনে মনে ভাবে এই ধরনের মানুষ গুলোর জন্য বেকারের দলটা টিকে আছে। উনারা শুধু নিরবে দিয়ে যান,কখনো ফেরত নেন না। ভাবনা গুলো রানার ঘুমের আগেই আসে। হঠাৎ তার মনে পড়লো রাতের নামাজটা পড়া হয়নি।বাদ দেয়া জিনিসটা অবশেষে বের করতে পারলো।রুমের বাতি জালিয়ে অজু করতে গেলো। হয়তো বাবার গরম পানির বাকিটুকু রয়ে গেছে। নামাজ শেষ করে রানা তাড়াহুড়ু করে শুয়ে পড়লো। শরীররটা গভীর ঘুমে নেমে যেতে চাচ্ছে । আর কি যেনো মনে করতে চাচ্ছিলো কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি, চোখ গুলো জুড়িয়ে আসছে ঘুমে… চলবে… Related posts:পুনরায় নাকুগাঁও স্থলবন্দরে বাণিজ্য কার্যক্রম শুরুশেরপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এক কৃষক খুনশেরপুরে সাঁতার প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত Post Views: ৩৭৮ SHARES ফিচার বিষয়: