জামালপুরে ফের বাড়ছে পানি ॥ ত্রাণের অপেক্ষায় দুই বৃদ্ধ মহিলা অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ২:৩২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২০ জামালপুর প্রতিনিধি ॥ দুই সপ্তাহ পানি বন্দির কিছুটা উন্নতির পর রোববার জামালপুরে আবারো বন্যার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পউবো) জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ এবং পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান জানান, এতে করে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ি, উপজেলার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের বিস্তার্ণ এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়ে আবারো হাজারও মানুষ পানিবন্দি পড়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়া আবারো প্লাবিত হচ্ছে নিুাঞ্চল। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও তিনি জানান। এদিকে করোনা মহামারির সাথে জামালপুরে দেখা দিয়েছে আগাম বন্যা। জেলায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৭টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নসহ জামালপুর পৌর শহরের নাওভাঙ্গার চর এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানি উঠেছে ষাটোর্ধ বিধবা বৃদ্ধ তারা বানু আর আলিয়া বেওয়ার ঘরে। তার এখন আশ্রয় নিয়েছে জামালপুর পৌর শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের উপর। বয়সের কারনে কোন কাজ-কর্ম করতে পারে না তারা। তাই তাদের দিন কাটে অনাহারে-অর্ধাহারে। তাদের দিন কাটছে খুব কষ্টে। ত্রাণের অপেক্ষায় বসে আছে শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেয়া দুই বিধবা বৃদ্ধ মহিলা। জামালপুর পৌর শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে ষাটোর্ধ দুই বিধবা বৃদ্ধ মহিলা বসে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নাওভাঙ্গার চরের বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া ঘর-বাড়ির দিকে। ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে গড়ে উঠেছে নাওভাঙ্গার চর নামে একটি গ্রাম। এখানে প্রায় অর্ধশত পরিবারের বসবাস। সেই নাওভাঙ্গা চরে বাস করেন আব্দুল হামিদের স্ত্রী ষাটোর্ধ বিধবা তারা বানু। তার চোখে মুখে দুঃশ্চিন্তা আর কষ্টের ছাপ। চোখের কোনে জমে আছে পানি। রোগে আর বয়সের ভারে শরীরে চামড়া কুঁচকে গেছে। দেখেই বুঝা যায় খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের। কথা বলতেই তার চোখে জল গড়িয়ে পড়ে। কাঁন্না জড়িত কন্ঠে বললেন কি আর বলমু বাবা ৮ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। কোন ছেলে সন্তান নাই আমার। আমার ৫টা মেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে। তারা এখন যার যার স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করছে। আমার মত বুড়া মানুষের খোঁজ খবর রাখে কে? আগে এই বাড়ি, সেই বাড়ি কাজ করে আমার চলতো। এখন বয়স হয়ছে, শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বেঁধেছে। এখন কাজ করার শক্তি শরীরে নাই। যাদের বাড়িতে কাজ করতাম, তারাও এখন কাজে নেয় না। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। আমার এক ভাতিজা, কষ্ট দেখে বলে তুমি আমার সাথে থাকবে। তার অভাব অনটনের সংসার। দিন মজুরি করে কোন রকমে বউ-বাচ্চা নিয়ে চলে। তার মধ্যে আমিও তার কাঁন্দে পড়লাম। তারপরেও কোনভাবে এক বেলা-দুই বেলা খেয়ে না খেয়ে জীবন চলছিলো। কিন্তু নদীর পানি বেড়ে যাওয়াই ঘর-বাড়ির পাশাপাশি ফসলি জমিও তলিয়ে গেছে। ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়াই সড়কে এসে আশ্রয় নিছি। এখন আমার ভাতিজার কোন কাজ-কর্ম নাই। আয়-উপার্জনও নাই। খুব কষ্টে আমাদের দিন কাটছে। এখানে মেম্বর-চেয়ারম্যান কেউ এখনো আসে নাই। কেউ আমাদের কিছু দেয়নি এখনো। তাই বাঁধের পাশে বসে আছি কিছু ত্রাণের আশায়। যদি কেউ কিছু দেয়। তারা বানুর পাশেই বসে ছিলো বিধবা আলিয়া বেওয়া। সে আর তারা বানুর পাশাপাশি বসবাস করে। আলিয়া বেওয়া নাওভাঙ্গার চরের বিশু মন্ডলের স্ত্রী। পাঁচ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে নিঃস¦ জীবন যাপন করছেন তিনি। শরীরের গঠনের দিক থেকে দুইজনে প্রায় একই। তারা বানুর মত রোগে আর বয়সের কারনে তার শরীরের চামড়াও কুঁচকে গেছে। চোখে মুখে কষ্টের ছাপ লেগে আছে। দুই দিন থেকে না খেয়ে থাকা বৃদ্ধা বিধবা আলিয়া কথায় বলতে পারছিলো না। কান্না ভরা কন্ঠে তিনি বলেন, আমার ৩টা ছেলে আছে। বড় ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সে বউ-বাচ্চা নিয়ে সেখানেই থাকে। আর ছোট দুই ছেলে জামালপুরেই অন্যের দোকানে কাজ করে। সেখান থেকে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোন রকমে তাদের সংসার চলে। আমার দেখা-শুনা করে না তারা। বাসা-বাড়িতে কাজ করতাম। তা দিয়েই আমার জীবন চলতো। প্রায় ২ বছর থেকে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আছি। আমার কোমরের হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। কোমর নিয়ে নড়াচড়া করা খুব কষ্ট। এখন আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে পারি না। বয়স আর রোগের কারনে কেউ কাজ নেয় না। খুব কষ্টে আছি। আমি বিধবা ভাতা পায়। তা দিয়ে কিছু ওষুধ কিনি বেদনা কমানোর জন্য। খাওয়ার খুব কষ্ট। বন্যার কারনে ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়াতে আরো বেশি কষ্টে পড়েছি। সবাই তো বাঁন্দের উপর আছে। ঘর-বাড়ি ডুবে না গেলে এর-ওর বাড়িতে চেয়ে-চিন্তে কোন রকমে জীবন চলতো। এখন তো সবারই সমস্যা। এখানে কে কারে দেখে। আমাদের ঘর-বাড়ি বানের পানিতে ডুবে গেছে। বাঁন্দের উপর এখন পর্যন্ত কেউ কোন সাহায্য সহযোগিতা করে নাই। তাই এখানে বসে আছি যদি মেম্বার-চেয়ারম্যানরা কিছু দেয়। অন্য কোন মানুষ যদি সহযোগিতার হাত বাড়ায়। এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, বন্যা মোকাবেলায় জেলায় এ পর্যন্ত ৭৮৪ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জিআর ক্যাশ, দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর তা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হয়েছে। আরো ত্রাণ বরাদ্দ পেলে চাহিদা অনুযায়ী বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণ করা হবে। জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাবে চলতি বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলা এবং ৮টি পৌরসভা, ৪৯টি ইউনিয়নের ৩৫১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৯৩ হাজার ২২৫টি পরিবারের তিন লাখ ৯৮ হাজার ৬২৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৩৪৩ হেক্টর জমির ফসল। এছাড়া ১২৬ কিলোমিটার আংশিক কাঁচা রাস্তা ও ২৪ কিলোমিটার আংশিক পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বন্যার পানির তোড়ে ৪৫৭টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ৬ হাজার ৩০৬টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩৫৫টি নলকূপ ও ৩৮১টি ল্যাট্রিন, ৪১টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চারটি ব্রিজ কালভার্ট ও তিন কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী। নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়া আবারো প্লাবিত হচ্ছে নিুাঞ্চল। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও তিনি জানান। Related posts:শেরপুরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নার উদ্বোধনটেন্ডারে ই-জিপি চালু করলো শেরপুর জেলা পুলিশচট্টগ্রামে বন্দুকযুদ্ধে নিহত এক, একে-২২ রাইফেল উদ্ধার Post Views: ৩৮৭ SHARES সারা বাংলা বিষয়: