শেরপুরে ভুয়া সনদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯

শ্যামলী নিউজ ডেস্ক : বগুড়ার শেরপুরে ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদে চাকরি করছেন ছয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আর বাকিদের নিয়োগেও নানা জটিলতা রয়েছে। 

ওইসব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে  ওইসব বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করা হয়।

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা মিললেও পদটিতে এখনও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন অভিযুক্ত শিক্ষকরা। এতে করে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য অপেক্ষমান শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দফতর জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উপজেলার ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের অভিজ্ঞতার সনদ যাচাই-বাছাই করেন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদে  চাকরি করা শিক্ষকরা হলেন- উপজেলার বরিতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিউটি আক্তার, চোমরপাথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম রব্বানী, দশশিকাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রইছ উদ্দীন, দারুগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তম কুমার রায়, আড়ংশাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাহের হোসেন ও চকখাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোছা. আকলিমা খাতুন। 

এছাড়া বাকিদের নিয়োগও নিয়ম মাফিক এবং যথাযথ হয়নি। তথ্য গোপন ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ নেয়া শিক্ষকরা হলেন-ঘোলাগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারগিস আক্তার, চকপাহাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, ররোয়া আর্জিনা হামিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তারিকুল ইসলাম, বিলজয়সাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. আবুল কালাম আজাদ, নিশিন্দারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সানাউল্যা আনসারী, ভায়রা পালাশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. মোজাম্মেল হক ও উদগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রভাস চন্দ্র সরকার। 

তবে বাঘমারা শান্তি নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম ও চোমর পাথালিয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক দুলালুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি।

শিক্ষা অধিদফতরসহ বিভিন্ন দফতরে পাঠানো অভিযোগে জানা যায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৯৯১সালের নিয়োগবিধি এবং নিয়োগকালীন সময়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত মানা হয়নি। এক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অভিজ্ঞতার যেসব সনদ জমা দেন সেগুলোর অধিকাংশই ভুয়া। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ভুয়া সনদ দিয়েই প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি করছেন তারা। এমনকি সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তাদের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী কাগজপত্র চাওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের একজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর সঙ্গে আঁতাত করে গোপনে মিথ্যা তথ্য আর জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ বিধি মোতাবেক যোগ্যতা আছে মর্মে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে অধিদফতরে পাঠিয়ে পদটি অবৈধভাবে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন অভিযুক্ত শিক্ষকরা। তবে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। একইসঙ্গে ওই প্রতিবেদনটি যথাযথ না হওয়ায় বাতিল হয়ে যায়। পরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে এই উপজেলায় নতুন যোগদান করা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পুনরায় যাচাই-বাছাই কমিটি করে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেন। আর ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে অনিয়ম আর জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ নেওয়া শিক্ষকদের থলের বিড়াল বেড়িয়ে এসেছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে অভিযুক্ত শিক্ষকদের পক্ষে চোমরপাথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ নিয়েছেন তারা। কোন জালিয়াতি বা অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়নি। এমনকি অভিজ্ঞতার সনদও ঠিকই আছে। এছাড়া শিক্ষা অফিসের গঠিত তদন্ত কমিটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। 

এদিকে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিনা খাতুন বলেন, সহকারী শিক্ষকদের অভিযোগটি তদন্ত করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে একটি কমিটি করা হয়। সেই কমিটি অভিযোগগুলো এবং নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা সনদ যাচাই-বাছাই করে। পরবর্তীতে কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। 

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন বলেন, শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাঠানো তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি এখনও হাতে পাইনি। পেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।