নালিতাবাড়ীতে যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়ে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পৌরবাসী অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ১:০৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৫ শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভা, যা ভোগাই নদের দুই পাড়ে গড়ে ওঠা একটি ছোট শহর, তার প্রবেশ মুখেই এক ভিন্ন বাস্তবতা চোখে পড়ে এক বিশাল উন্মুক্ত ময়লার ভাগাড়। এই দুর্গন্ধময় স্থানটি যেন শহরের পরিবেশ রক্ষায় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার এক জীবন্ত প্রমাণ। নালিতাবাড়ী পৌরসভার প্রবেশ মুখেই হাজ্বী সাইজ উদ্দিন ফুয়েল পাম্প পার হতেই নকলা-নাকুগাঁও স্থলবন্দর মহাসড়কের দুই পাশে খোলা জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে শহরের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। পৌরসভার প্রতিদিনের ময়লা, আবর্জনা ছাড়াও, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল বর্জ্য, মৃত পশুপাখি, এমনকি কসাইখানার উচ্ছিষ্টও নিয়মিত এখানে ফেলা হয়। খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা এসব বর্জ্য থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং জমে থাকা ময়লায় বিভিন্ন রোগবাহী মাছি ও পোকামাকড়ের জন্ম হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এছাড়াও, শহরের ভিতরে সাহাপাড়া এলাকায় ফরহাদ ক্যাডেট একাডেমির সামনের সড়কের পাশে আরেকটি উন্মুক্ত ময়লার ভাগাড় রয়েছে। এটিও দুর্গন্ধ আর পোকামাকড়ের উৎপত্তিস্থলে পরিণত হয়েছে, অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত পথচারী ও স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা যাতায়াত করে। ১৯৯৫ সালে গঠিত শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভা প্রায় ৯ দশমিক ২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত পৌর এলাকা, যেখানে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মানুষ বসবাস করেন এবং প্রতিদিন প্রায় ৭ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৩০ বছরেও এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো নির্দিষ্ট কাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলস্বরূপ, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও হাসপাতালের আশপাশেও ময়লা স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে এসব বর্জ্য প্রতিদিন মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে, যা মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত করছে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ, ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে আশপাশের কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জরুরি ভিত্তিতে এমন দুর্বিষহ ও স্বাস্থ্যহানিকর পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ফরহাদ ক্যাডেট একাডেমির প্রধান শিক্ষক তুহিন আহমেদ বলেন, রাস্তার পাশে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলার কারণে এলাকাজুড়ে বিষাক্ত ধোঁয়া ও তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এসব রাস্তা দিয়ে বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, এভাবে চলতে থাকলে শহরের পরিবেশ দিন দিন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। পৌরসভার নয়আনীকান্দা গ্রামের কৃষক রিপন মিয়ার অভিযোগ, পৌরসভার পরিবেশ বাঁচাতে গিয়ে এই ভাগাড়ে যেভাবে ময়লা আবর্জনা পঁচাচ্ছে, এই ক্ষেতে কাজ করতে আসলে দুর্গন্ধে আমাদের কলিজা পঁচে যায়। এই দুঃখের কথা কেউ শোনে না। এই এলাকায় আর থাকা যায় না। পৌর এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলা হচ্ছে এবং এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। তার দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নালিতাবাড়ী পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার মনির হোসাইন জানান, ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো ডাম্পিং ইয়ার্ড না থাকায় বাধ্য হয়েই খোলা জায়গায় ময়লা ফেলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পৌরসভার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই ডাম্পিং ইয়ার্ড করার জন্য এবং তারা জায়গা খুঁজছেন। উপযুক্ত জমি পেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপন করে বর্জ্য ফেলা হবে। এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি বলেন, পৌরবাসীর দুর্ভোগ ও পরিবেশদূষণ সম্পর্কে তারা অবগত। তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দ্রুতই জমি খুঁজতে বলেছেন এবং জমি পেলেই ডাম্পিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে বলে জানান। পৌরবাসীর প্রত্যাশা, দীর্ঘদিনের এই অব্যবস্থাপনা এবার সত্যিকার অর্থে কোনো সমাধান পাবে এবং নালিতাবাড়ী পৌরসভা একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর শহরে রূপান্তরিত হবে। Related posts:ঝিনাইগাতীতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ২ মামলা, গ্রেফতার ১নকলায় সাবেক শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ, নারী ও শিশুসহ ১১ বাংলাদেশি গ্রেফতার Post Views: ৫৩ SHARES শেরপুর বিষয়: