শেরপুরে একই পরিবারের সাত প্রতিবন্ধীর পাশে দাড়ালো পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম

প্রকাশিত: ৪:৪৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২০

নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি ॥ শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সমেশ্চুড়া গ্রামের একই পরিবারের সাত প্রতিবন্ধী ভাই বোনের পাশে দাড়ালো পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম। ওই সময় তিনি বলেন, এই সাত প্রতিবন্ধী ভাই বোনের জন্য প্রয়োজনীয় সার্বিক সহযোগিতা করবে জেলা পুলিশ। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সমেশ্চুড়া গ্রামে বসবাস করে মৃত সফর উদ্দিনের পরিবার। পরিবারটি ভারতের আসাম রাজ্যের নওগাঁ জেলায় বসবাস করত। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর সফর উদ্দিন আসাম ছেড়ে চলে আসেন ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলায়। ১০ বছর সেখানে বসবাসের পর ১৯৫৮ সালে তিনি নালিতাবাড়ী সীমানেন্তর সমেশ্চুড়া গ্রামে বসত গড়ে তোলেন।
এ পরিবারের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হলো একই পরিবারের ১০ ভাইবোনের মধ্যে সাত সদস্য প্রতিবন্ধী। প্রত্যেকেই একই সঙ্গে দৃষ্টি ও বাকপ্রতিবন্ধী। সবার বড় বোন হাজেরা খাতুনকে অনেক কষ্টে বিয়ে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে স্বামী মারা যান। অন্য ভাইবোনের মধ্যে রমিজা খাতুন (৬২), আজগর আলী (৬০), জয়নাল আবেদীন (৫৮), রহিমা খাতুন (৫৬), কুলসুম (৫৪) ও ফাতেমা (৪৮) একই বাড়িতে বসবাস করেন। কারও বিয়ে হয়নি।
বড় ভাই মাহমুদ আলী (৭০) বলেন, ‘জন্মগতভাবেই আমার সাত ভাইবোন দৃষ্টি ও বাকপ্রতিবন্ধী। কেউ চোখে দেহে না, কথা কইতে পারে না। সময়ের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে করতে এরা এখন ভীষণ ক্লান্ত। বয়স বাইরা যাওয়ায় এখন কারোরই নিজের ওপর ভরসা নাই। অভাবের কারণে এরা অহন নিজের জীবনের প্রতি ভালোবাসা হারায়া ফেলছে।’ তিনি বলেন, আমার বাবা পাহাড়ি এলাকায় এসে মাত্র দুই কাঠা জমিতে বসত গড়ে তোলেন। প্রতিবন্ধী সাত ভাইবোনকে নিয়ে তিনি দুর্বিষহ জীবনযাপন করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমার ওপর এদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পড়ে। কিন্তু আমার কিছুই নেই। জমিজমা চাষ করে কোনো রকমে চলি। সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ২০১০ সালে একটি গরু কিনে দেন আমার ভাইবোনের জন্য। সেই গরু থেকে চারটি গরু হয়েছে। কয়েকটি গরু বিক্রি করে কিছু জমি কিনেছি। সেই জমির ধানে ভাইবোনদের ভাতের কিছুটা সংস্থান হয়। এ ছাড়া তারা ভিক্ষা করে দিন চালায়।


মাহমুদ আলীর স্ত্রী মানিক জান বলেন, রমিজা আর কুলসুম কোনো ভাতা পায় না, কেউ ১০ টাকা কেজির চাল পায় না। তজনকে বলেছি। কেউ কথা রাখেনি।
৩ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম এই প্রতিবন্ধী পরিবারকে দেখতে যান। এ সময় তিনি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী সাত ভাইবোনকে একটি করে লেপ, ৫টি কাপড়, ২টি লুঙ্গি, ২৫ কেজি চাল, ১০ কেজি ডাল, ৫ কেজি চিনি, সাবান, তেলসহ প্রসাধন সামগ্রী তুলে দেন। এ সময় পুলিশ সুপারকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রতিবন্ধী ভাইবোনেরা। তারা বিভিন্নভাবে তাদের অভাব-অভিযোগের কথা পুলিশ সুপারকে জানানোর চেষ্টা করেন।