করোনার প্রাদুর্ভাবে শেরপুরে পূজি হারিয়ে দিশেহারা মুরগী খামারীরা

প্রকাশিত: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেরপুর জেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। শেরপুরের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক, যদিও অকৃষি অর্থনৈতিক কার্যক্রম জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। জেলার মোট ৩,৩৫,৪৬০ বসতবাড়ির মধ্যে, ৬০.১২% খামার। শেরপুর জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৬শ মুরগীর খামার রয়েছে। ওইসব খামার মালিকরা লাভবান হওয়ায় জেলায় অনেক বেকার মুরগীর খামাড়ের দিকে ঝুকছিল। কিন্তু করোনার কারণে এবার সঠিক সময়ে মুরগী ও ডিম বিক্রি করতে নাপাড়ায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে খামরীরা। এছাড়া মরে গেছে অনেক মুরগীও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা চৌরাস্তায় মো: ফারুক মিয়া প্রথমে ছোট করে একটি মুরগীর খামার গড়ে তুলেন। ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় ব্যাংক থেকে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে খামার বড় করেন তিনি। এতে ৭ হাজার পাকিস্তানি কক মুরগীর বাচ্চা ছিলো। এগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলো। কিন্তু বিক্রির সময় হলেই দেশে দেখা দেয় ভয়াবহ করোনার প্রাদূর্ভাব। শুরু হয় দেশে লকডাউন। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বন্ধ করে দেয় মুরগীর পাইকাররা। আর স্থানীয় মুরগী ক্রেতারাও মুরগীর দাম বলে অর্ধেকের কম। তাও আবার বাকীতে। সময় মতো তার মুরগী বিক্রি করতে না পারায় তার খামারের প্রায় ৩ হাজার মুরগী ইতোমধ্যে মারা গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণসহ তার সব পূজিই শেষ হয়ে গেছে। এর ফলে অনেকটা ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন তিনি। তার প্রশ্ন এখন সে কি করবে ?
এ বিষয়ে খামারী ফারুক মিয়া জানান, করোনার কারণে মুরগীর দাম অর্ধেকেরও বেশী কমে গেছে। ঢাকা থেকে পাইকার না আসার ফলে সময় মত মুরগী না বিক্রি করতে পারায় এ অবস্থা হয়েছে। এদিকে করোনার কারণে ডাক্তারও আসছে না। চিকিৎসা করাতে পারছি না বিধায় প্রতিনিয়ত মুরগী মারা যাচ্ছে।
এদিকে একই অবস্থা জেলার অন্য খামারীদেরও। অনেক খামারী তিনের একভাগ দামে মুরগী বিক্রি করে লোকসান দিয়ে এখন পূজি হারিয়ে নতুনকরে খামার করা বন্ধ করে দিয়েছে। জেলার আর বিভিন্ন খামারীদের সাতে কথা বলে জানা যায়, এবার জেলার মুরগীর খামারীদের অন্তত ৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। খামারীদের দাবি তারা যদি সরকারী সহায়তা পায় অথবা সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ পায় তবে খামারীরা আবারও মুরগী পালন শুরু করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, সরকার যে প্রনোদনা ঘোষনা করেছেন এর সুযোগ সুবিধা খামারীরাও পাবেন। কিভাবে তাদের দাম নিশ্চিত করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি।
জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, আমরা জানি খামারীরা তাদের মুরগী ও ডিমের দাম পাচ্ছেন না। তাদের বিষয়েও সরকার চিন্তা-ভাবনা করছেন। আর আমরা শিশু খাবারের ত্রাণের সাথে মুরগীর ডিম দিবো। একই সাথে তিনি বর্তমান অবস্থায় মুরগী গোস্তা ও ডিম খাওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বানও জানান।