সওজের নিষেধাজ্ঞা অমান্য ॥ ঝুকিপূর্ন ভোগাই ব্রীজ দিয়ে মালবাহী ভারী যানবাহন চলাচল অব্যাহত

প্রকাশিত: ৬:২৯ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২০

দিনের বেলায় এই ব্রীজের মেরামতের কাজ চললেও রাতের চিত্র ভিন্ন

মাহফুজুর রহমান সোহাগ ॥ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও স্থলবন্দর সংলগ্ন ভোগাই নদীর উপর নির্মিত ঝুকিপূর্ন ভোগাই ব্রীজ দিয়ে ১০ টনের অধিক মালবাহী ভারী যানবাহন চলাচলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও বালু খেকুরা ৩০-৪০ টন ওজনের দশ চাকার ভেজা বালুর ট্রাক চলাচল অব্যাহত রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। দিনের বেলায় এই ব্রীজের মেরামতের কাজ চললেও রাতের চিত্র ভিন্ন। ঝুকিপূর্ন এই ব্রীজ দিয়ে দেদারচে শতাধিক ভারী যানবাহন চলাচল করায় সেতুটি এখন মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থের মুখে পড়েছে। এবস্থায় কর্তৃপক্ষের জোড়ালো কোন নজর দারী নেই। প্রতিদিনই যার যার মতোই এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।


সূত্রে জানা যায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে ১৮৪ টি ঝড়নার উৎস মুখ থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ভোগাই নদীর উপর নাকুগাঁও স্থলবন্দর সংলগ্ন ১০ বছর পূর্বে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় দুরন্ত ভোগাই নদীর সেতু। সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওই কাজটি বাস্তবায়ন করে। ১২৮টি পাইল ও ৬টি ব্যাচে ১৮৬.৪০ মিটার দীর্ঘ ওই সেতু নির্মাণে ৩ দফায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে প্রায় ১২ কোটি টাকা করা হয়। এই ব্রীজটির শুরু থেকেই সর্বাধিক ১০ টন মালামাল বহন করার ক্ষমতা রয়েছে। ২০০৯ সালে জনসাধারণ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এটি। এরপর ওই সেতুর উপর দিয়ে সীমান্ত সড়ক চালু হয়।
নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দরের কয়লা-পাথর বোঝাই ভারি যানবাহন চলাচল করত এ সেতু দিয়ে। ইতি পূর্বেও হয়েছে কিন্তু গত দু’বছর ধরে ভোগাই নদী থেকে অবৈধভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করে একদল বালু খেকো। ৩০-৫০ টন পর্যন্ত ওজনের ভেজা বালুর ট্রাক ভোগাই সেতুর উপর দিয়ে নিয়ে যেতো।
এ ব্রীজ ঝুকিপূর্ন হওয়ায় গত গত ১৯ মে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী নালিতাবাড়ীতে করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মাঝে নগদ অর্থসহায়তা বিতরণ এক অনুষ্ঠানে আসেন। ব্রীজের এই দুবস্থার তথ্য পাওয়ার পর তিনি ক্ষুব্ধ হন। নিরব প্রতিবাদ সরুপ তিনি মাত্র ৫ মিনিটের সহজ রাস্তায় রামচন্দ্রকুড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে না যেয়ে প্রায় ২৩ কিলোমিটার ঘুরে তিনি সেখানে যান।


ঘটনাটি জানার পর সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকায় স্থানীয় এমপি মতিয়া চৌধুরী প্রশাসনকে ওই বিষয়ে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেন। কিন্তু বিষয়টি গায়ে লাগায়নি তারা। অতিরিক্ত লোডের ফলে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোগাই সেতুর একাংশ ধ্বসে পড়ে। পাশাপাশি সেতুর নিচের পাইল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধ হয়ে যায় সেতুর উপর দিয়ে সব রকমের যাতায়াত।
কিন্তু নিম্নমানের কাজ করে কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সেই সেতু জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘটনায় তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। এ দিকে সাবেক এই মন্ত্রীর নিরব প্রতিবাদের পরেও এক শ্রেণীর বালুখেকুরা সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৩০-৪০টন ওজনের দশ চাকার ভেজা বালুর ট্রাক চলাচল অব্যাহত রেখেছে।
সরকারী এই স্থাপনা ব্রিজটি ঝুকিপূর্ন হওয়ায়র কারণে নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রকুড়া, পোড়াগাঁও, নয়াবিলসহ ১০ ইউপি চেয়ারম্যান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরে কাছে লিখিত অভিযোগ করে বালু উত্তোলন বন্ধ ও সেতু ধসের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানালেও যেন কোন কাজেই আসছে না। এর পরেও তড়িঘড়ি করে স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ ছোট খাটো মেরামত করে ব্রিজটি চালু করে দেয়।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, ঝুকিপূর্ন এই ব্রিজ দিয়ে মালবাহী ভারী ওজনের যান বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাছাড়া মাননীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর নির্দেশনা রয়েছে, তাই অচিরেই এ বিজ্র দিয়ে ভারী যানবাহ চলাচল ঠেকাতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এ ব্যাপারে শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সড়ক, ব্রীজ র্নিমান ও রক্ষনাবেক্ষনের কাজ করি। ব্রিজটি ঝুকিপূর্ন হওয়ায় ইতিমধ্যে আমরা ঐ ব্রিজ দিয়ে দশটনের অধিক ওজনের মালবাহী ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ড দিয়ে দিয়েছে এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে নোটিশের মাধ্যমে অবহিত করেছি। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতা পেলে এটা বন্ধ করা সম্ভব। এ ব্রিজ দিয়ে যেন দশটনের অধিক ওজনের মালবাহী ভারী যান চলাচল না করতে পারে এ ব্যাপারে আবারো স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে।