স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছি

প্রকাশিত: ৪:৩৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২২

২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে একটি নির্মানাধীন ভবনে কাজ করার সময় পঞ্চম তলা থেকে পড়ে মারা যান জাহিদ আকন্দের বড় ভাই জহুরুল ইসলাম। সেই শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আবারও স্বজন হারিয়েছেন তিনি।
গত ১৫ আগস্ট (সোমবার) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্ট ছিটকে প্রাইভেটকারে পড়ে মারা যান জাহিদের স্ত্রী ঝর্না বেগম, শিশু সন্তান জান্নাত (০৬) ও জাকারিয়া (০২)। একসঙ্গে পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে অতি শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন জাহিদ। স্ত্রী-সন্তানদের কথা চিন্তা করে সারা দিন পাগলের মতো নিজের সঙ্গে কথা বলেন। দিন কাটছে তার স্ত্রী-সন্তানদের কবরের পাশে।

২১ আগস্ট রবিবার সকালে জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের আগ-পয়লা ঠেংগে পাড়ার গ্রামের বাড়িতে জাহিদ আকন্দের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
জাহিদ আকন্দ বলেন, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছি। কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না তাদের কথা। কাদের নিয়ে সময় কাটবে এ ভাবনায় দিন-রাত কেটে যাচ্ছে। এখন মা ছাড়া পরিবারে আর কেউ নেই।
জাহিদ আকন্দ বলেন, ভাগ্নি রিয়া মনির বিয়ের দাওয়াত খেতে ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার সবাই আশুলিয়া যায়। শনিবার বিয়ে শেষে বাড়ি ফিরে আসি আমি। এরপর সোমবার বউভাত শেষে ঝর্নাকে বাসে করে আসতে বলেছিল তার বাবা। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় শুক্রবার ঢাকায় গিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মেলান্দহ বাড়িতে আসার কথা ছিল আমার।
জাহিদ বলেন, আমার ঝর্না শখের বসে প্রাইভেট কারে বসেছিল। এই শখটাই কাল হয়ে দাঁড়াল তার। আজ শখ পূরণ করতে গিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো তাকে।
এ সময় জাহিদ ক্ষোভ করে বলেন, এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের খোঁজ নিতে এখনো কেউই এলো না। হয়তো কয় দিন পরে কিছু সহায়তা নিয়ে আসবে। আমাকে সহায়তা করবে। কিন্তু তারা কি আমার পরিবারকে ফিরিয়ে দিতে পারবে?
প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্ট (সোমবার) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্ট ছিটকে প্রাইভেট কারে পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচ আরোহী নিহত হন। দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তারা ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন- ২৬ বছর বয়সী হৃদয় ও ২১ বছর বয়সী রিয়া মনি। তাদের বিয়ে হয়েছে ১৩ আগস্ট আর ১৫ আগস্ট ছিল বউভাত।
হৃদয়ের বাড়ি রাজধানীর কাওলায়। বউভাত শেষে কনের বাড়ি আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন তারা। হৃদয়ের বাবা রুবেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। রুবেল ছাড়াও যারা মারা গেছেন তারা হলেন- কনের মা ফাহিমা বেগম, তার বোন ঝর্না বেগম, ৬ বছর বয়সী জান্নাত ও দুই বছর বয়সী জাকারিয়া।