সময় এখন নৌকা তৈরি ও মেরামতের

প্রকাশিত: ১০:০৮ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২৫

আব্দুল্লাহ আল-আমিন, নকলা (শেরপুর) : বর্ষা মৌসুমের শুরুতে নতুন নৌকা তৈরি ও পুরাতন নৌকা মেরামতের ব্যাপক চাহিতা থাকায় নৌকা তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত কিছু দিন ধরে শেরপুরের নকলা উপজেলার ১নং গণপদ্দী, ২নং নকলা, ৩নং উরফা, ৫নং বানেশ্বরদী, ৮নং চরঅষ্টধর ও ৯নং চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের নৌকা তৈরি ও মেরামতে কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

স্থানীয় অনেকে জানান, সাধারণত ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ডিঙ্গি নৌকা ও বাইচের (দৌঁড়ের) নৌকাই বেশি তৈরি করা হচ্ছে। তবে, অনেক কারিগর আছেন যারা সারা বছর অলস সময় কাটান, কিন্তু বর্ষার শুরুতে তাদের চাহিদাও বেড়ে যায়।
বিভিন্ন এলাকার নৌকা তৈরির কারিগররা জানান, নিচু এলাকার জনগন নতুন নৌকা তৈরির পাশাপাশি পুরাতন নৌকা মেরামতের জন্য তাদের কাছে ছুটে আসেন। এখন নৌকা তৈরি বা মেরামতের ভরা মৌসুম চলছে। তবে নৌকায় ব্যবহৃত সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে।
গণপদ্দী ইউনিয়নের বিহাড়িরপাড় এলাকার কাঠমিস্ত্রি আয়নাল হক বলেন, ‘আমরা সারাবছর কাঠের বিভিন্ন কাজ করি। বর্ষার শুরুতে কিছু নৌকার কাজ আসে এতে বাড়তি আয় হয়। তবে আগের তুলনায় নৌকার চাহিদা কমেগেছে।’
উরফা ইউনিয়নের বেনিরগোপ এলাকার আমানুল্লাহ আসিফ জানান, আগে বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের জন্য এবং শখ করে নদ-নদীতে মাছ শিকারে ব্যবহারের জন্য তাদের বাড়িতে বেশ কয়েকটা নৌকা ছিলো। এখন পানিও বেশি আসেনা, তাছাড়া নদীতে আগের মতো বড় বড় মাছও নেই। তাই এখন তাদের নৌকার ব্যবহার অনেকটাই কমেগেছে।’
বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী এলাকার মাছ শিকারি মনসুর আলী বলেন ‘কোন একসময় আমাদের বাড়ির পাশের চায়রা বিলটি গভীরতা এবং পদ্ম ও সিংড়ার জন্য জেলাব্যাপি পরিচিত ছিল। কালের বিবর্তনে এ বিলটি ভরাট হয়ে পানির গভীরতা কমেগেছে। বিলুপ্ত হয়েগেছে ঐতিহ্যবাহী পদ্ম ও সিংড়া। বিলে ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে উঠেছে অগণিত মৎস্য খামার। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ। তাই এখন আর নৌকা দিয়ে মাছ শিকারের পরিবেশ নেই। এসব কারনে আমাদের মতো লোকের নৌকার ব্যবহার নেই বললেই চলে।’
চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়নখোলা এলাকার কাঠমিস্ত্রি আলমাছ আলী জানান, নৌকা তৈরিতে কড়ই, হিজল, মেহগনির কাঠ ও বাঁশ বেশি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আলকাতরা, তারকাটা ও গজলসহ বেশ কিছু উপকরণ প্রয়োজন হয়। তিনি আরও জানান, এ বছর কাঠের গুনগত মান ও আকৃতি অনুযায়ী প্রতি নৌকা তৈরিতে ৭ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। নৌকা তৈরির কাঠ, বাঁশ ও লোহাসহ অন্যান্য সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার নির্মান খরচ বেশি হচ্ছে। তবুও যাদের প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন, তারা কেউই নৌকা বানানো বা মেরামতে থেমে নেই বলেও তিনি জানান।