সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আসেন বেলা সাড়ে ১২ টায়, বহিষ্কার হয়েও অফিস করছেন নকল নবিশ

প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২৫

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধিঃ সাব রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা অফিস করেন তার মন মতো৷ বেলা এগারোটার আগে কখনই তাকে অফিসে পাওয়া যায় না। কখনো আবার বেলা সাড়ে ১২ টায় অফিসে গিয়েও তাঁর দেখা মিলে না। অন্যদিকে, বহিষ্কার হওয়া অফিসের এক নকল নবিশকে অবৈধভাবে অফিস করানোসহ অফিসের সকল কাজে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে৷ এমনই নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা শারমীন আক্তার ও বহিষ্কৃত নকল নবীশ জাহাঙ্গীর আলম জনির বিরুদ্ধে।

গত বৃহস্পতিবার এসব অনিয়ন ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশ নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাব রেজিষ্টার কার্যালয়ে প্রতিটি সাব-কবলা দলিলের জন্য সরকারি রেজিষ্ট্রেশন ফি- ৩৬০ টাকা এবং হেবা ঘোষণা দলিলের ফি- ৮০০ টাকা । তবে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম জনি প্রতিটি সাব-কবলা দলিলের জন্য ২ হাজার ৩০০ টাকা এবং হেবা ঘোষণা দলিলের জন্য ২৯০০ টাকা করে নেন। এছাড়াও সরকারের অবমুক্তকৃত খ তফসিলের ভূমি রেজিষ্ট্রেশনের জন্য ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন৷
এদিকে, জাহাঙ্গীর আলম জনিকে গত ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারী অফিসের অন্যান্য কর্মচারী ও জেলা রেজিস্ট্রারের কর্মচারীদের সাথে কর্তৃত্বমূলক আচরণ, দৈনিক বালাম বহিতে দলিল নকল না করা ও বিভিন্ন অসদাচরণে লিপ্ত থাকার অভিযোগে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। পরে একই বছরের ২৩ মার্চ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও অফিস আঙিণায় তাঁর প্রবেশ স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়৷
এদিকে রোববার সরেজমিনে উপজেলা সাব-রেজিষ্টার কার্যালয়ে গেলে দেখা যায়, সাব- রেজিস্ট্রার কর্মকর্তার কক্ষের দরজা বন্ধ রয়েছে।কর্মকর্তা না আসায় এজলাসের কাজ ও শুরু হয়নি। বাহিরে সেবাগ্রহীতারা অপেক্ষা করছেন। এসময় বহিষ্কৃত নকল নবীশ জাহাঙ্গীর আলম জনি এজলাসে বসেই ধূমপান করছিলেন। দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত সাব-রেজিষ্টার শারমীন আক্তার অফিসেই আসেননি৷
দুপুর ১২.২৫ মিনিটেও সাব রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা অফিসে না আসার বিষয়ে লিটন নামে অফিসের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা বলেন, স্যার হয়তো জ্যামে (যানজটে) আটকে আছেন৷ এমনিতে সকালেই আসেন৷
এসময় দলিল করতে আসা লোকমান হোসেন বলেন, সকাল ১০ টা থেকে আইসা বইসা থাকার পর বেলা সাড়ে ১২ টায় সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আসেন৷ এটা তো এই অফিসের প্রতিদিনের ঘটনা৷ বাড়তি টাকা না দিলে দলিলও হয় না৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নালিতাবাড়ী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের এক কর্মচারী বলেন, স্যার (সাব রেজিষ্টার) ১১ টা বা সাড়ে ১১ টার আগে কখনই অফিসে আসেন না৷ কখনও আবার আরোও পরে আসেন৷ আর বহিষ্কৃত নকল নবীশ জনি তো ইচ্ছামতো সব করে। সে পবিত্র এজলাসে বইসাই সিগারেট খায় ।
অভিযোগ অস্বীকার করে জাহাঙ্গীর আলম জনি বলেন, আমাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। পরে আমি জবাব দেওয়ায় আমায় আবার অফিস করতে বলা হয়েছে। আমায় স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়নি।
এদিকে দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে উপজেলা সাব-রেজিসট্রার কর্মকর্তা তার অফিসে আসার পর তাঁর সাথে দেখা করতে চাইলে তিনি জানান, এখন ব্যস্ত আছি৷ কারো সাথে দেখা করতে পারবো না। পরবর্তীতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ নি।
এবিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার আনিছুর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।