শেরপুরে পীরের দরবার গুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা

প্রকাশিত: ৮:৫২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২৪

শেরপুরে মুর্শিদপুর দোজা পীরের দরবারে হামলার ঘটনায় হাফেজ উদ্দিন নামে এক হামলাকারীর মৃত্যুর জের হিসেবে এবার দরবারে ফের ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা। ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কয়েক ঘন্টা ওই তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকলেও বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের বাধা উপেক্ষা করে পীরের দরবারে তাণ্ডব চালিয়ে গুড়িয়ে দেয়। ওইসময় দরবারে থাকা গরু, মহিষ, ছাগল ও দুম্বাসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা। ঘটনার পর দরবারের পক্ষ থেকে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা যায়, শেরপুর সদরের লছমনপুর গ্রামের মুর্শিদপুর খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারের মুরিদ ও স্থানীয় জামতলা ফারাজিয়া আল আরাবিয়া ক্বওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং তৌহিদী জনতার মধ্যে বেশকিছু দিন বিরোধের জেরধরে গত ২৬ নভেম্বর দরবারে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পার্শ্ববর্তী কান্দাশেরীরচর গ্রামের ইদু মিয়ার ছেলে হাফেজ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে আহতদের মধ্যে হাফেজ উদ্দিন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ নভেম্বর সকালে মারা যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কুসুমহাটিস্থ জমশেদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ মাঠে নিহত হাফেজ উদ্দিনের নামাজে জানাজায় শেরপুরের সকল মাদ্রাসা বন্ধ রেখে অংশ নিতে মাইকিং করা হয়।
এদিকে জানাজাকে ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই মুর্শিদপুর দরবার ও কুসুমহাটি বাজার এলাকায় শক্ত অবস্থান নেয়। তবে কুসুমহাটিস্থ জমশেদ আলী কলেজ মাঠে হাফেজ উদ্দিনের জানাজায় বক্তব্যে বক্তারা হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীনদের মুক্তি এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দোজাপীরকে গ্রেফতারের দাবি জানান। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা জানাজা ছেড়ে লাঠিসোটা নিয়ে দরবারের দিকে অগ্রসর হয়। ওইসময় সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষুদ্ধদের বাধা দিলেও সেটি উপেক্ষা করেই তারা পীরের দরবারে ব্যাপক ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ওইসময় তারা দরবারের টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। একইসাথে দরবারের গরু-মহিষ, দুম্বা, ছাগল, ভেড়াসহ গবাদিপশু ও সব ধরনের মালামাল নিয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় তিন ঘন্টার ওই তাণ্ডবে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতার ভিড়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি স্থানীয় দমকল বাহিনীও।
তবে শেরপুর ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক জাবেদ হোসেন মো. তারেক জানান, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের গাড়ি কুসুমহাটি বাজারে পৌঁছলেও নিরাপত্তার অভাবে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমরা অটোযোগে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি যে সেখানে এখন কোন আগুন নেই।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, হাফেজ উদ্দিন নিহতের ঘটনায় এখনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।